ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মাসেতুর জটিলতা শুরুর এগারো পিলারের কাজ শেষ হতে ৮ মাস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯
পদ্মাসেতুর জটিলতা শুরুর এগারো পিলারের কাজ শেষ হতে ৮ মাস পদ্মাসেতু। বাংলানিউজ

মুন্সিগঞ্জ: পদ্মাসেতুতে কাজের শুরুতে ১১টি পিলার নিয়ে জটিলতা শুরু হয়। নদীর তলদেশে মাটির গুনাগুনগত বৈচিত্র্যের কারণে এসব পিলারের নকশার অপেক্ষায় থাকে ঠিকাদার। নকশা সমাধান হয়ে চূড়ান্ত হলে এরপর কাজ শুরু হয়। এসব পিলার সম্পন্ন হলে মূল সেতুর সব পিলারের কাজও শেষ হবে। এই ১১টি পিলারের কাজ শেষ হতে ৮ মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।  

পদ্মাসেতুর কাজের গতি চলমান রাখতে এবারের ঈদে ছুটি নেননি অধিকাংশ প্রকৌশলী ও শ্রমিক। কিন্তু প্রিয় মানুষের সঙ্গে আনন্দ উদযাপন করতে না পারার কোনো আক্ষেপ নেই তাদের।

কাজে যোগদানের পর ঈদে ছুটি নেননি এমন অনেক প্রকৌশলীও আছেন। স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হতে আর কত সময় লাগবে তার জন্য দেশের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। সব প্রতিকূলতা আর বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলছে সেতুর কাজ। এবারের বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীতে প্রচণ্ড স্রোত আর পলির কারণে কাজের পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে যাওয়ায় থেমে থাকা কাজগুলো শুরু হয়েছে।  

জানা যায়, পদ্মার বুকে ৪২টি পিলারের মাথা তুলে দাঁড়ানোর দৃশ্য দেখতে সময় লাগবে আরও ৮ মাস। ১১টি পিলারের কাজ ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা আছে প্রকৌশলীদের। সেতুর মোট ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩১টি পিলারের কাজ সম্পন্ন। ডিজাইন অনুযায়ী সেতুর পিলারগুলো ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল। এসব পিলারে ছিল নকশা জটিলতা, চূড়ান্ত সমাধান হয়ে আসতে লেগেছে বাড়তি সময়। প্রকৌশলীদের ভাষ্য, পিলারের নকশার সমস্যার কারণেই পদ্মাসেতুর কাজ নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। এই ১১টি পিলার হলো- ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২।  

পদ্মাসেতু।  ছবি: বাংলানিউজ১১টি পিলারের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মূল সেতুর এক প্রকৌশলী বাংলানিউজকে জানান, সেতুর ৬, ৭, ৮, ১০, ১১ নম্বর পিলারের অবস্থান পদ্মা নদীর মাঝখানে। প্রচণ্ড স্রোতের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এই ৫টি পিলারের কাজ। এখন পানি কমতে শুরু করেছে, স্রোত স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। এসব পিলারের পাইল ড্রাইভিং শেষ হয়েছে। বর্তমানে পাইলের ভেতর স্ক্রিন গ্রাউটিংয়ের কাজ চলছে। সেতুর ২৬ নম্বর পিলারের অবস্থান বিআইডাব্লিউটিএ'র নৌযান চলাচল নৌরুটে। পাইল ড্রাইভিং শেষ করে পরবর্তী ধাপের কাজ সুবিধাজনক সময়ে শুরু হবে। সেতুর ২৭ নম্বর পিলারে পাইল ক্যাপের জন্য যন্ত্রপাতি সেট করা হচ্ছে। সেতুর ২৯ ও ৩০ নম্বর পিলারের বটম প্লাগ শেষ হয়েছে এবং এখন পাইলগুলো কংক্রিটিং হচ্ছে। সেতুর ৩১ ও ৩২ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপের কাজ চলছে। এর মধ্যে ৩১ নম্বর পিলারের পাইলের রড বাইন্ডিং চলছে ও ৩২ নম্বর পিলারের পাইলের পাইল ক্যাপের অর্ধেক কাজ হয়েছে। আবহাওয়াসহ সবকিছু অনূকুলে থাকলে এই ১১টি পিলারের কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগবে ৮ মাস।  

তিনি আরও জানান, বর্তমানে ২২ নম্বর পিলার থেকে ৩২ নম্বর পর্যন্ত চলছে ড্রেজিং। দুইটি ড্রেজার পলি অপসারণে কাজ করছে। এর মধ্যে আবার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটের চ্যানেলেও পদ্মাসেতু কর্তৃপক্ষের ড্রেজার দিয়ে কাজ চালনা করতে হয়। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে এই ড্রেজিং। পিলারের কাছে এখন পলি জমি আছে, যার কারণে স্প্যান বহনকারী 'তিয়ান ই' ক্রেনটি চলাচলে সমস্যা তৈরি হবে। প্রচণ্ড স্রোত আর পলির কারণে এতদিন পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ থেমে আছে। ড্রেজিং শেষে ও পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে এলে স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা করা হবে।  

পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি।  

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। নদীশাসনের কাজ করছে চীনের প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।