ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ঝিলপাড় বস্তিবাসীর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯
ঝিলপাড় বস্তিবাসীর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

ঢাকা: অগ্নিকাণ্ডে সব হারানো ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দারা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তরফ থেকে নানা ধরনের আশার বাণী-আশ্বাস পেয়ে আসছেন। কিন্তু দিনে দিনে তাদের কপালে স্পষ্ট হয়ে চলেছে দুশ্চিন্তা আর শঙ্কার ভাঁজ। যদিও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, দুশ্চিন্তার কারণ নেই, তাদের পাশে আছে সরকার।

অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্থদের নিকটস্থ পাঁচটি স্কুলে রাখার কথা বলেছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাসহ জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রায় চার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে থাকছেন বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতন নামে একটি স্কুলের নিচতলা থেকে চতুর্থতলা পর্যন্ত জায়গাজুড়ে।

পাশেই বিজিএমইএ মেডিকেল সেন্টারে থাকছে ১০-১২ জনের একটি পরিবার। এদের সঙ্গে আলাপে সংকট দুর্ভোগের কথাই শোনা গেলো বেশি।

বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতন থাকা শিরিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, তিন বেলা খাওয়া-দাওয়া পাই। ওষুধ দেওয়া হচ্ছে আমাদের। খুব সমস্যা হচ্ছে পানি নিয়ে, খাবার ও ব্যবহারের পানি পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো। এছাড়া নারীদের জন্য বাথরুমের ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের খুব ভুগতে হচ্ছে।

দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, স্কুল যখন খুলে যাবে আমাদের তখন কী হবে? আমরা তখন কোথায় যাবো? কোথায় থাকবো? নেতারা বলছেন, ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সেটা কবে করা হবে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলছেন না। অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত ঝিলপাড় বস্তি।  ছবি: বাংলানিউজসুমন হাওলাদার নামে ওই স্কুলে থাকা আরেকজন বলেন, এই ঘিঞ্জি পরিবেশে গাদাগাদি করে আমরা থাকছি। অন্য কোথাও যেতেও পারছি না। ঘরও পাচ্ছি না। কয়দিন থাকতে পারবো আমরা এখানে নিশ্চিতভাবে জানিও না। কেউ কিছু বলছেও না।

বিজিএমইএ মেডিকেল সেন্টারে আশ্রয় নেওয়া এক পরিবারের সদস্য রিনা বলেন, আমার এখানে (ঝিলপাড় বস্তি) জন্ম। এখানে আমরা ৪০ বছর ধরে থাকছি। এই ভবনে থাকার কারণে কখনো খাবার পাই কখনো খাবার পাই না। স্কুলে যখন মাইকিং করে খাবার দেয়, তখন খাবার আনতে যাই। খাবার থাকলে পাই, কখনো পাই না। এখানে (বস্তিতে) কবে ঘর বানিয়ে দেবে? আর কবে আমরা থাকবো। কেউ বলতেও পারছে না। আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলে কাজ করে খেতাম। আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত হলে আমাদের আর কিছুই চাওয়ার ছিল না।

বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, এখন আমাদের স্কুল বন্ধ। কিন্তু আমরা শিক্ষকরা আছি। ২৪ আগস্ট আমাদের স্কুল খুলবে। স্কুলে ক্লাস শুরু হলে ক্ষতিগ্রস্তরা কোথায় যাবেন আমরা বলতে পারি না। কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।  

যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বস্তির বাসিন্দারা যেখানে থাকতে চেয়েছেন আমরা সেখানেই থাকতে দিয়েছি। কোনো ধরনের জোর করিনি। শুধু বলেছি যেখানে বিদ্যুৎ-পানি আছে সেখানে থাকতে।

তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সরকারের পক্ষ থেকে কিছু টাকা অনুদান ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। কত টাকা অনুদান দেওয়া হবে এটা বুধবার (২১ আগস্ট) বলা যাবে। সরকারের তরফ থেকে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য দেবো। আমরা নির্ধারণ করে দেবো রাস্তার জায়গা রেখে বস্তিতে কোথায় কোন জায়গায় ঘর তোলা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
এমএমআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।