ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নৌপথে দুর্ঘটনারোধ ও নিরাপত্তা বাড়ায় জনমনে আস্থা বেড়েছে

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
নৌপথে দুর্ঘটনারোধ ও নিরাপত্তা বাড়ায় জনমনে আস্থা বেড়েছে লঞ্চে করে ঢাকা ফিরছেন যাত্রীরা। ফাইল ছবি

ঢাকা: দেশের অভ্যন্তরীণ লঞ্চগুলোর আধুনিকায়ন, দুর্ঘটনারোধ ও নিরাপত্তা বাড়ায় জনমনে আস্থা বেড়েছে নৌপথে। একইসঙ্গে বিগত ১০ বছরে নৌপথগুলোর উন্নতি, পুনরুদ্ধার, আধুনিকমানের লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি ও যাত্রীদের সেবার মান বাড়ায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

তারা বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো নদীপথ। দিনদিন নৌপথ ও লঞ্চের ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে।

ফলে বাড়ছে যাত্রীর সংখ্যা। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এসময় প্রায় এক কোটি নগরবাসী নৌপথে যাতায়াত করে থাকেন। আর সারা বছর যাত্রীদের প্রায় অর্ধেক নৌপথে যাতায়াত করে থাকেন।

নৌপথে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে সম্প্রতি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে সবাইকে নিয়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, তাতে সন্তুষ্ট হয়েছি। যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও অসন্তুষ্টি নেই। আমাদের লঞ্চ ও ফেরিগুলো ফ্রিকোয়েন্টলি চলেছে, ফেরিতে কোনো জট ছিল না, জট ছিল রাস্তায়। নৌপরিবহন খাতের সব কর্মকর্তাদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়। এছাড়া নৌযান চলাচলে ওভারলোড বা অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল না।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব-উল-ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যাত্রীদের সেবার মান ও নিরাপত্তা বাড়ায় নৌপথে যাতায়াতে জনগণের আস্থা বেড়েছে। গত রোজার ঈদ থেকে কোরবানির ঈদে আমরা আরো বেশি যাত্রীদের সেবা দিতে পেরেছি। ফলে এবারের ঈদে নৌপথে জনসাধারণের বাড়ি যাওয়া-আসা শান্তির বা স্বস্তির ও সুন্দর-সুশৃঙ্খল হয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়নি। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে পাঁচটি লঞ্চ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরি ও লঞ্চঘাটে নির্বিঘ্নে নৌচলাচলের জন্য বিকল্প চ্যানেল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার বিগত বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এবারই প্রথম নৌবন্দরে সিনিয়র সিটিজেন, গর্ভবতী মা, প্রতিবন্ধীদের জন্য টোল ফ্রি করা হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে লঞ্চে ও বন্দরে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সর্বোপরি আমাদের ব্যবস্থাপনা ভালো থাকায় দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কিছু হয়নি।  

নদীপথে লঞ্চ মাস্টারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, ওভারলোডিং বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য তাসরিফ, এমভি টিপু, ফারহান নামে তিনটি লঞ্চকে জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ঠ জেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ঠ সহযোগিতা করেছে।  

বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নৌপথের ও লঞ্চের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এখন আমাদের টু-স্টার ও থ্রি-স্টার মানের লঞ্চ রয়েছে। আমাদের লঞ্চগুলো দিনদিন বড় হচ্ছে। ১০ বছরে এখাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আমাদের দূরপাল্লায় ছোট লঞ্চ নেই বললেই চলে। ফলে দিনদিন নৌপথে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে।

বরগুনা থেকে ঢাকায় আসা যাত্রী রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, এবার বাড়ি যাওয়ার সময়ও ভালোভাবে গিয়েছি। এলামও ভালোভাবে। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য টার্মিনাল ও নৌযানে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নজরদারি ছিল।

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বীর বীক্রম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নতুন নতুন লঞ্চগুলো আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন থ্রি-স্টার মানের। নৌপথে চলাচল নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত ও আরামদায়ক হওয়ায় দিনদিন যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে থাকি। তবে আমরা পুরোপরি স্বার্থক বলবো না। ভুলত্রুটি সবখানেই থাকে। মানুষজন এখন অনেক সচেতন হয়েছে। যাত্রীদের কাছে আমাদের অনুরোধ ঝুঁকি নিয়ে কেউ যেন লঞ্চে না উঠে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথের মধ্যে ২০ হাজার ৪০০ কিলোমিটার নৌপথ হারিয়ে গেছে। এরমধ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত সরকারের সময় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৩টি নৌপথ খনন কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার পথ উদ্ধার করা হয়েছে ও প্রায় তিন হাজার একর জমি পুনঃরুদ্ধার করা হয়েছে। নৌরুটে নাইট নেভিগেশন চালু, নদীর তীরে দুইটি ইকোপার্ক নির্মাণ, দক্ষ চালক সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ সেন্টার নির্মাণ, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি উদ্ধারকারী জাহাজ ক্রয়, প্রায় ৩০টি ড্রেজার নির্মাণ ও সংগ্রহ করা হয়েছে। দেশের নদীবন্দর আধুনিকায়ন, ১০০টি পন্টুন নির্মাণ, চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌপথের উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্প গ্রহণ, নদীদূষণ ও নাব্যরোধে মাস্টার প্লান, বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া ভৈরব, কটিয়াদি, মোংলা, চাঁদপুর, মাওয়া, গোয়ালন্দ, ইচলি, হাজীগঞ্জ, শ্রীপুর, ভোলা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা ও স্বন্দ্বীপের নৌ রুটের খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। পাশাপাশি বরগুনার লঞ্চঘাটে যাত্রী ছাউনি স্থাপন ও বরিশালে বিআইডব্লিউটিএ পাইলট বিশ্রামাগার উদ্বোধন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭  ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯ 
জিসিজি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।