ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাঁধনের শ্লীলতাহানি মামলার আসামিদের খালাসে ইভটিজিং বাড়বে

জাকিয়া আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১০
বাঁধনের শ্লীলতাহানি মামলার আসামিদের খালাসে ইভটিজিং বাড়বে

ঢাকা: বাঁধনের শ্লীলতাহানির মামলায় আসামিদের বেকসুর খালাসে বিস্ময়-হতাশা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকার কর্মীরা।

তারা বলছেন, এই রায়ের মাধ্যমে ইভটিজিংয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

সেই সঙ্গে এ ধরনের অপকর্ম প্রতিরোধে আরও কঠোর আইন করার পক্ষেও মত দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার মূল আসামি ফজলুল হক রাসেলসহ তিন আসামিকে বেকসুর খালাস দেন।

২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইটে টিএসসিতে শ্লীলতাহানির শিকার হন শাওন আক্তার বাঁধন। সেই রাতে হাজারো মানুষের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল শাখার ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি ফজলুল হক রাসেল ও তার অনুসারীদের টানা-হেঁচড়ার কীর্তি পরদিন সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছিলো সারা দেশ। লজ্জায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বাঁধন। তবে এর আগে চিহ্নিত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর ৮ মাস ঝুলে থাকার পর মঙ্গলবার এ মামলার রায়ে বেকসুর খালাস পান আসামিরা।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমি এই ঘটনার পর পরই হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলাম। কারণ ঘটনার পরেরদিন আমরা পত্রিকায় দেখেছি বাঁধনকে নিয়ে যখন টানা-হেঁচড়া করা হয় তখন সেখানে অগণিত পুলিশ কর্তব্যরত ছিলেন। তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি বরং পত্রিকায় আমরা তাদের হাস্যোউজ্জ্বল মুখ দেখেছি। যেন তারা বিষয়টাতে মজা পাচ্ছিলেন। ’

রায় প্রসঙ্গে সরাসরি কোনো মন্তব্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়ে গেলে তা ইভটিজারদের উৎসাহীত করবে। ’

সালমা আলী তার রিটের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘আমার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় আদালত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শকরে প্রতি রুল জারি করে জানতে চেয়েছিলেন- পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন বাঁধনকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছিলেন। অথচ খুবই হাস্যকর বিষয় এর ৬ বছর পর ২০০৬ সালে হাইকোর্ট এসব ঘটনার সময় পুলিশের করণীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কিছু গাইডলাইন দিয়ে রায় দেন। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ আইন থাকা দরকার। যেন এই অপরাধ কমিয়ে আনা যায়। ছেলেদের সঠিক প্রোপার কাউন্সিলিং, গুড প্যারেন্টিং এবং পজেটিভ ডিসিপ্লিনের ব্যবস্থা থাকা দরকার। আমাদের বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টিও সঠিক বিচার না পাওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এতো দীর্ঘ সময়ে বাদী তার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। আর মেয়েটিরতো নিরাপত্তার ব্যাপারও আছে। রাষ্ট্র সেটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ’  

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মহাসচিব ব্যারিস্টার সিগমা হুদা বলেন, ‘আমি যতদূর জানি বাঁধন নিজে সাক্ষী দিতে আসেননি। কিন্তু সাক্ষী না এলে কোর্টের যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সেটা কোর্ট নিয়েছিল কিনা আমি তা জানি না। কোর্ট কেনো জরিপ করেছে কিনা তাও জানি না। তবে এই রায়ের ফলে ইভটিজিংয়ের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞানের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী আয়েশা আফরিন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা এমন একটি মামলা এতো দিন কীভাবে ঝুলে থাকলো! এই মামলার বিচার যদি সঙ্গে সঙ্গে হতো তাহলে কিছুটা হলেও তাদের বিচার হতো বলে আমার মনে হয়। এদের বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত ছিল। আমরা যারা রাস্তায় বের হই তারা খুব ভয়ে থাকি। অহরহ ইভটিজিং হচ্ছে। অথচ ওদের কিছু বলাও যায় না। ’
 
মামলার নথি থেকে জানা যায়, এ মামলায় মোক্তার হোসেন, মনির উদ্দিন মামুন ও মাহমুদুর রহমান তাহেরসহ আরও ১২ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছিল। তবে পুলিশ অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় ঘটনার মূলহোতা ছাত্রলীগের শহীদুল্লাহ হল শাখার সহসভাপতি ফজলুল হক রাসেলকে বাদ দেয়। এ নিয়ে সমালোচনা হলে ২০০১ সালের ১৪ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাসেলসহ আরও তিনজনকে অভিযুক্ত করে পুনরায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

মামলা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মোট ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাদী বাঁধন নিজেও কাঠগড়ায় আসামিদের শনাক্ত করেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিলেও মূল বাদী শাওন আক্তার বাধঁন নিজেই সাক্ষ্য দেননি। তাই আসামিরা খালাস পেয়েছেন। ’

অবশ্য বিভিন্ন নথিপত্র ঘেটে দেখা গেছে, এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল তা ছিল খুবই দুর্বল।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতাদের হস্তক্ষেপ এবং প্রভাবের কারণেই এমন অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল যার ফলশ্রুতিতে আসামিরা খালাস পেয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।