ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গণহত্যার স্মৃতিসম্বলিত কম্বোডিয়ার ‘কিলার ফিল্ড’ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৯
গণহত্যার স্মৃতিসম্বলিত কম্বোডিয়ার ‘কিলার ফিল্ড’  কম্বোডিয়ার ‘কিলার ফিল্ড’ 

কম্বোডিয়া থেকে: এশিয়া মহাদেশের ছোট একটি দেশ কম্বোডিয়া। ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডের মধ্যবর্তী এই দেশটি প্রাগৈতিহাসিক বেশ কিছু স্থানের জন্য বেশ বিখ্যাত।

কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন শহরটি ছোট হলেও বেশ সাজানো গোছানো ও পরিষ্কার। এখানকার দর্শনীয় জায়গাগুলোর একটি হলো, গণহত্যার স্মৃতিসম্বলিত ‘কিলার ফিল্ড’ নামক বধ্যভূমি।

ত্যুল স্লেং জেনোসাইড মিউজিয়াম এই ‘কিলার ফিল্ড’-এ প্রতিষ্ঠিত। ত্যুল স্লেং ছিল একটি বিদ্যালয়। খেমার রুজ শাসনামলে (১৯৭৫-১৯৭৯) এটিই ছিল কিলিং ক্যাম্প।

নমপেন শহরের সেন্ট্রাল মার্কেট থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় ২০ মিনিটের পথ। মিউজিয়ামে ঢোকার মুখেই টিকিট কাউন্টার। ভেতরে আছে অনেক গাছপালা। কে বলবে-সাধারণ মানুষকে ধরে এনে এখানে চালানো হতো নির্যাতন, শেষে জবাই করে হত্যা।

খেমের রাজবংশের সুদীর্ঘ শাসন এবং ১৫ থেকে ১৮ শতকের মধ্যে কয়েকবারই থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে যুদ্ধ করতে হয়েছে কম্বোডিয়াকে।

বক্সে রাখা নির্যাতিতদের পোশাক ও নিহতদের মাথার খুলি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফরাসিদের পতন হলে কম্বোডিয়া জাপানিদের দখলে যায়। ১৯৫৩ সালে কম্বোডিয়ার রাজা সিহানুক ফরাসিদের কাছ থেকে দেশকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করেন। ১৯৬৮ সালে কমিউনিস্টরা কম্বোডিয়ায় নতুন গৃহযুদ্ধ শুরু করে। সিহানুক ১৯৭০ সালে দেশ ছাড়েন। তারপর কম্বোডিয়ায় আসে বিভীষিকা, যার সাক্ষী ত্যুল স্লেং।

পল পট নেতৃত্বে আসার পর দেশের নাম রাখা হয় খেমের রিপাবলিক। তিনি শহরের সব পেশার মানুষকে ক্ষেত-খামারে পাঠাতে শুরু করেন এবং দিনরাত কাজ করাতে থাকেন। এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। বন্দিও করা হয় হাজার হাজার মানুষকে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের অংশ হিসেবে এ সময় আমেরিকাও কমিউনিস্ট নিধন করতে কম্বোডিয়ার ওপর বোমা বর্ষণ করে। পুরো কম্বোডিয়া এসময় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়।

পল পটের শাসনামলে ত্যুল স্লেং হাইস্কুলকে অস্থায়ী কারাগার বানানো হয়। আমেরিকান বা বিদেশি গুপ্তচর সন্দেহ হলেই তাদের ওপর চালানো হতো বর্বরোচিত নির্যাতন। গুলির শব্দে শত্রু সজাগ হয়ে উঠতে পারে ভেবে বন্দিদের জবাই করেই মারা হতো।

কম্বোডিয়ার ‘কিলার ফিল্ড’ জানা গেছে, এই কারাগারে একসঙ্গে এক থেকে দেড় হাজার বন্দি রাখা হতো। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সেখানে ২০ হাজার বন্দিকে হত্যা করা হয়।

গেট অতিক্রম করে মিউজিয়ামে ঢুকতেই প্রত্যেককে একটি মোবাইল সেট ও এয়ার ফোন দেওয়া হয়। নাম্বার ধরে মোবাইল সেটে প্রেস করলে কানে ভেসে আসবে সেই গণহত্যার বর্ণনা। কোনও গাইড ছাড়াই জানা যাবে পুরো এলাকার নির্মম কাহিনী।

সেখানে বন্দিদের শত শত ছবি আছে। যেভাবে অত্যাচার করা হতো, তার স্কেচও আঁকা আছে। যেসব জিনিসপত্র দিয়ে অত্যাচার করা হতো সেগুলোর নমুনা সংরক্ষিত আছে। একটি কক্ষে রাখা আছে খুলি, কঙ্কাল, হাড়গোড়। দেয়ালে ঝুলছে খুলি দিয়ে বানানো কম্বোডিয়ার মানচিত্র। আছে বড় একটা স্যুভিনির শপ।

এমন স্মৃতি পর্যটকদের নাড়া দিয়ে যায়, বাংলাদেশি ভ্রমণপিপাসুদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় একাত্তরের বধ্যভূমির দিকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৯
টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।