ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘যারা আমাদের বাড়িতে ঘোরাঘুরি করতো তারাই সেই খুনি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৯
‘যারা আমাদের বাড়িতে ঘোরাঘুরি করতো তারাই সেই খুনি’ শোক দিবসের স্মরণ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: পিআইডি

ঢাকা: জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকারী বিশ্বাসঘাতকদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, দিনরাত আমাদের বাড়িতেই যারা ঘোরাঘুরি করতো, তারাই সেই খুনি হিসেবে আসলো।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় এ কথা বলেন তিনি।

‘ধন্য সেই পুরুষ যার নামের ওপর পতাকার মতো দুলতে থাকে স্বাধীনতা’ শীর্ষক আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভার সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা।

এসময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখের বিষয় এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা খুব চেনা। বাংলাদেশ খুব ছোট জায়গা। দিনরাত আমাদের বাড়িতেই যারা ঘোরাঘুরি করতো, তারাই তো সেই খুনি রূপে বিরাজমান হলো; তারাই তো খুনি হিসেবে আসলো।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান একটা মেজর ছিল। তাকে প্রমোশন দিয়ে দিয়ে মেজর জেনারেল করা হলো। মাসে একবার হলেও সে আমাদের বাড়িতে আসতো; কখনো একা, কখনো খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসতো। কারণ খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসলে মার সঙ্গে দেখা করার উচিলায় উপরে আসতে পারতো। তারা আমাদের ওই লবিতে দুটো মোড়া পেতে বসতো। ঘন ঘন যাতায়াত ছিল।

‘ডালিম, ডালিমের শাশুড়ি, ডালিমের বউ, দিনরাত আমাদের বাসায় ঘোরাঘুরি করতো। মেজর নূর, কামালের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় ওসমানীকে যখন সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক করা হলো, তখন তার এডিসি কামালকে নিয়োগ দেওয়া হলো। তার সঙ্গে, একইসঙ্গে, একই রুমে থাকতো, একই সঙ্গে তারা এডিসি ছিল। আর এরাই এই হত্যাকাণ্ডটা চালালো। আর মোস্তাক তো মন্ত্রী ছিল। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরবর্তীতে অনেক চেহারা আপনারা দেখেছেন, যারা বিএনপিতে যোগ দিয়েছিল। এখন অনেক বড় বড় কথা অনেক নীতি কথা শুনায়। তারা কে ছিল? তারা কী এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল না?

তিনি বলেন, মোস্তাক সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়ায় জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করলো। জিয়াউর রহমান কীভাবে এতো বিশ্বস্ত হলো যে তাকেই সেনাপ্রধান করলো। সেটা কর্নেল ফারুক রশীদ বিবিসিতে যে ইন্টারভিউ দিয়েছিল, সেই ইন্টারভিউ থেকে জানতে পারেন। তারা যে জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে এবং জিয়ার কাছ থেকে ইশারা পেয়েছে, জিয়া তাদের আশ্বস্ত করেছিল যে, এগুলো করলে তারা সমর্থন পাবে। সেটা তো তারা নিজেরাই বলে গেছে।

‘তাহলে এরা কারা ছিল? এরা কী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী? এরা কী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করতো? না তারা তা করতো না। ’

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠন, ষড়যন্ত্র, তখনকার নেতাদের অনেকে পরিস্থিতি ও বাস্তবতা উপলব্ধি না করার কথা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শোক দিবসের স্মরণ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: পিআইডি

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ পুনর্গঠনে বিশাল কর্মযজ্ঞ। বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা, এই কঠিন কাজটি মাত্র সাড়ে তিন বছরে মধ্যে তিনি করে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, সেই সময় নানা চক্রান্ত- পাটের গুদামে আগুন, আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাতজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। যারা স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার আলবদর বাহিনীর, তারা অনেকেই দেশ ছেড়ে ভেগে গিয়েছিল। অনেকেই তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিল। আন্ডারগ্রাউন্ড বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তারা একের পর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে শুরু করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তখনকার যে একটা অবস্থা, সেটা বুঝতেই পারেনি। একটা দেশ দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল, শোষিত ছিল। তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করা হয়েছে। তারা এতো সহজে ছাড়বে না। তাদের দোসররা ছিল রন্ধে রন্ধে। আর তাদের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত অব্যাহত থাকবে এই উপলব্ধিটা তখনকার দিনে আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতার মধ্যেও আসেনি। তাই তারা এটা হয় নাই, ওটা হয় নাই- নানা ধরনের প্রশ্ন, কথা, লেখালেখি, অনেক কিছু শুরু করেছিল।

তিনি আরও বলেন, ক্ষত-বিক্ষত একটা দেশ, অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু একটা দেশ-সেই দেশটাকে গড়ে তোলা যে অত্যন্ত কঠিন-দুরূহ কাজ। এটা যে একদিনেই, একটা কথায় গড়ে ওঠে না, এই উপলব্ধিটা যদি সকলের মাঝে থাকতো, তাহলে হয়তো পনেরোই আগস্টের মতো এতো বড় একটা আঘাত এ দেশের ওপর আসতো না।

শেখ হাসিনা বলেন, চক্রান্ত সুদূরপ্রসারী ছিল। এতো কিছুর পরেও এতো চক্রান্ত, পরেও যখন বাংলাদেশ এগিয়ে গেল, বাংলাদেশের ইতিহাসে জিডিপি ৭ ভাগ জাতির পিতার সময় অর্জিত হয়েছে। চালের দাম ১০ টাকা থেকে কমে ৩ টাকা এসেছে। যখন একটা ভালো দিক দেশের জন্য এসেছে, মানুষের ভেতরে একটা স্বস্তি ফিরে এসেছে, চরম আঘাতটা কিন্তু তখনই এসেছে। যখন দেখল এতো চক্রান্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা যাচ্ছে না, তখনই তারা চরম আঘাত হানলো ৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে।

তিনি এও বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, বাংলাদেশ উন্নত হোক, বাংলাদেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাক, বাংলাদেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাক- এটা এই খুনির দল কখনো চায়নি। কারণ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে, আত্মমর্যাদা নিয়ে দাঁড়াবে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সফল হবে, এটা তারা কখনো চায়নি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাদের চাওয়াটাই ছিল পাকিস্তান শুধু ভালো থাকবে। বাংলাদেশ যেনো উপরে উঠতে না পারে। বাংলাদেশ যেনো স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে না পারে। যাতে তারা বলতে পারে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হয়ে, স্বাধীনতা অর্জন করে ভুল করেছে।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুল মতিন খসরু, জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৯
এমইউএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad