ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বাজারে হাঁক-ডাক না থাকলেও বেড়েছে সবজির দাম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৯
বাজারে হাঁক-ডাক না থাকলেও বেড়েছে সবজির দাম

ঢাকা: রাজধানীতে ঈদের পর নিত্যপণ্যের বাজার এখনও জমে ওঠেনি। বাজারগুলোতে নেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক নেই বললেই চলে। ক্রেতার অভাবে বাজারে সবজিসহ সব পণ্যের চাহিদা ও জোগান দু’টোই কম। এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে দামের ওপর। ফলে বাজারে সবজি, মাছ ও ডিমের দাম বেড়েছে। তবে চাহিদা কম থাকায় মাংসের দাম কমেছে। এদিন বাজারে শুধু কিছু সবজির দোকানে চলছে বেচা-কেনা। খুচরা বিক্রেতারা এখনও মোকামমুখী হয়নি বললেই চলে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, নিত্যপণ্যের বাজার জমে উঠতে আরো দুই-তিন দিন লাগবে। ঈদের ছুটিতে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের একটি বড় অংশ এখনও ঢাকায় এসে পৌঁছায়নি।

শনিবার ঈদের ছুটি শেষে মানুষজন শহরমুখী হলে আবার জমে উঠবে নিত্যপণ্যের বাজার। লোকজন না ফেরা পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা ও জোগান কোনোটি স্বাভাবিক হবে না বলে জানান বিক্রেতারা।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ, রায়সাহেব, নয়াবাজার, সেগুনবাগিচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের আগে মসলাসহ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছিল। বাড়তি চাহিদা থাকায় পিঁয়াজ, রসুন, আদা, বিভিন্ন ধরনের মসলাসহ বেগুন, শশা, টমেটো, আলুর দাম বেড়েছিল। ঈদের পর ক্রেতা সংকটে ভুগছে বাজারগুলো। এর মধ্যেও বেড়েছে সবধরনের সবজি, মাছ ও ডিমের দাম। বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে।  সে হিসেবে প্রতিডজন ডিমের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। আর ঈদের আগের দিন হঠাৎ বেড়ে যায় পিঁয়াজের দাম। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বাজারে প্রতিকেজি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। যা ঈদের দুই দিন আগে বিক্রি হতো ৪৫ টাকায়। সে হিসেবে পিঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ০৫ টাকা। এছাড়া ঈদের আগে বাজারগুলোতে সবধরনের সবজি পাওয়া যেত ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এখন সরবরাহে ঘাটতি থাকায় প্রতিকেজি সবজির দাম মান ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়।

এছাড়া রাজধানীর বাজারগুলোতে মাংসের চাহিদা কম থাকায় সব ধরনের মুরগীর মাংসের দাম কমেছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগী কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা কেজি। যা ঈদের আগে বিক্রি হতো ১৪০ টাকা ও ২০০ টাকা কেজি। প্রতি হালি কক মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর দেশি মুরগী হালি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ থেকে ২০০০ টাকা দরে। যা ঈদের আগে প্রতি হালি ককমরগী বিক্রি হতো ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়, আর দেশি মুরগী বিক্রি হতো ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকায়। এছাড়া তুলনামূলক চাহিদা কম থাকায় আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫২৫ থেকে ৫৫০ টাকায়। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।  

সূত্রাপুর বাজারের মাংস ব্যবসায়ী লাভলু বাংলানিউজ জানান, কোরবানির ঈদ হওয়ায় মাংসের চাহিদা কম। এজন্য মুরগীর মাংসের দাম কমেছে। ব্রয়লার ও লেয়ারের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা, কক মুরগীর দাম হালিতে ২০০ টাকা এবং দেশী মুরগীর দাম হালিতে ৩০০ টাকা কমেছে।  

ডিম ব্যবসায়ী আবলু হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে তিন দিন পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় ডিমের গাড়ি ঢাকায় আসতে পারেনি। ফলে চাহিদার তুলনায় ডিম সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। আমরা ঈদের আগে প্রতি ডজন ডিম ৮৫ টাকায় কিনে ৯০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন ৯০ টাকায় কিনে ১০০ টাকায় বিক্রি করছি।  

এদিকে রাজধানীর বাজারগুলোতে আবারো ক্রেতাদের অস্বস্তি দিচ্ছে সব ধরনের সবজির দাম। বাজার ও  মানভেদে সব ধরনে সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। বেশি দামের সবজি রয়েছে বেগুন, বরবটি, করলা, উস্তা, শসা, টমেটো ও লাউ। ভালোমানের প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।  প্রতি কেজি আলু ২৫ টাকা, কচুরলতি ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, বরবটি ৮০, কাকরোল ৬০ টাকা,  ধুনদুল ৫০ টাকা, এছাড়া ঝিঙা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শশা ৮০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, টমেটো ১৫০ টাকা, লেবুর হালি মান ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা। এসব সবজি ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।

এছাড়া লাউ প্রতি পিচ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি লাউ শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, লাল শাক, পালং শাক ১০ থেকে ২০ টাকা, পুঁই শাক ও ডাটা শাক ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। আর আদা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৬০ টাকা দরে।

সবজি বিক্রেতা আল আমিন বেপারী বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই। তাই সবজিও নেই। ক্রেতা না থাকলে সবজি এনে কি করবো। অল্প এনে অল্প বিক্রি করি। লোকজন ঢাকায় আসুক, তখন বাজারের কাস্টমারও থাকবো, আমগো দোকানে সবজিতে ভরা থাকবো। আগামী রোববার থেকে রাজধানীর বাজারগুলো জমে উঠবে বলে মনে করেন তিনি।

ঈদভাঙা বাজারে মাছের সরবরাহ কমায় বেড়েছে দাম। প্রায় সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে। তবে তুলনামূলক বাজারগুলোমে ইলিশের দাম বেশি বেড়েছে। ঈদের আগে বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের প্রতি পিচ ইলিশ মাছ বিক্রি হতো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। আর এর থেকে বড় ইলিশ ঈদের আগে বিক্রি হতো ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকা প্রতি পিচ। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ২৫০০ টাকায়।

এছাড়া রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৮০, আইড় ৮০০ টাকা, মেনি মাছ  ৪০০, বেলে মাছ প্রকারভেদে ৭০০ টাকা, বাইম মাছ ৭০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০ টাকা, পোয়া ৫০০ টাকা, মলা ৪৫০ টাকা, পাবদা ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা, শিং ৮০০, দেশি মাগুর ৮০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ২০০ টাকা, চাষের কৈ ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  

মাছ ব্যবসায়ী মধ্যম গোস্বামী বাংলানিউজকে  বলেন, কয়েক মাস ধরেই মাছের দাম চড়া থাকলেও বর্তমানে মোকামে মাছ কম আসছে। কারণ এখন শহরের থেকে গ্রামে চাহিদা বেশি। তারপরও এই ঈদে বাজারে মাংসের থেকে মাছের চাহিদা বেশি থাকে। ফলে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। লোকজন শহরমুখী হলে দাম আবার আগের মতো হবে বলে মনে করেন তিনি।

আগের দামেই বিক্রি  হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি কেজি নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫ দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রতি কেজি লবণ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, খোলা আটা ২৭ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৯।  
জিসিজি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।