ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জাতীয় শোকদিবস

বরিশালজুড়ে শোকের আবহ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
বরিশালজুড়ে শোকের আবহ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে শোকের তোরণ নির্মাণ। ছবি: বাংলানিউজ

ব‌রিশাল: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঘাতকের নির্মম বুলেটে মারা যান বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার কৃতি সন্তান বঙ্গবন্ধুর বোনের জামাতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তার পরিবারের ছয় সদস্য।

তাই এ অঞ্চলে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবসের আবহ থাকে একটু অন্যরকম। এরই মধ্যে নানা কর্মসূচি পালন করছে নিহতের পরিবারসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

১৫ আগস্টের ভয়াল কালরাতে শহীদদের স্মরণে প্রতিবছরের ন্যায় অন্যান্য জেলা ও উপজেলার চেয়ে এবারও মাসব্যাপী শোকের মাস পালনে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করা হয়েছে বরিশালজুড়ে।

শোকের মাসের প্রথমদিন থেকেই ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশাল অংশজুড়ে বহু শোকের তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।

জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকুলের উদ্যোগে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউপি কমপ্লেক্স ভবনকে শোকের চাদরে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে শোকের চাদরে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বরিশাল নগরের নাজিরের পুল ও পাশের ফুটপাত সংলগ্ন দেওয়াল। যা প্রতিবারই যুবলীগ নেতা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ( বিসিসি) প্যানেল মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনের উদ্যোগে করা হয়ে থাকে।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিসিসির উদ্যোগে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।  

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৫ আগস্ট জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল ১০টায় শহীদ সোহেল চত্বরের পাবলিক স্কয়ারে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বঙ্গবন্ধু ক্লাবের সহায়তায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, বেলা ১১টায় বরিশাল ক্লাবে প্রথমবারের মতো এতিম ও ‍দুস্থ শিশুদের অংশগ্রহণে সুকান্ত বাবু চিত্রাঙ্কন এবং রচনা প্রতিযোগিতা এবং অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ, বাদ আছর নগর ভবনে ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল।  

একইভাবে দলীয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জাতীয় শোকদিবসে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে শহীদ হন বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বাবা তৎকালীন মন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর বোনের জামাতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত।

শহীদ হন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর শিশু পুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত, বোন বেবী সেরনিয়াবাত, ভাই আরিফ সেরনিয়াবাত ও চাচাতো ভাই শহিদ সেরনিয়াবাতসহ অনেকে।

সেদিন ঘাতকের নির্মম বুলেটে বিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়ার পর আজও শিশু পুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতের স্মৃতি বহন করে চলছেন তার মা সাহান-আরা বেগম এবং বাবা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।

সেদিনের স্মৃতি আর ঘাতকের বুলেটের আঘাতে যারা আজো বেঁচে আছে তাদের মধ্যে একজন সেদিনের সন্তান হারা মা সেরনিয়াবাত পরিবারের পুত্রবধু সাহান আরা বেগম।  

পৈশাচিক ওই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাহান আরা বেগম বলেন, হত্যাকারীরা প্রথমেই আমাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়। ঘুমন্ত সবাইকে উঠিয়ে নিচতলার একটি কক্ষে এনে দাঁড় করিয়ে রাখে। দোতলা থেকে নামার সময় আমার বড় ছেলে সুকান্ত বাবু ছিলেন আমার সঙ্গেই। তবে ছোট ছেলে সাদিক আমার কোলেই ছিল। নিচে এসে সুকান্ত কেঁদে ছিল আমার কোলে ওঠার জন্য কিন্তু আমি ওকে কোলে তুলে নিতে পারেনি। আমার ভাসুর শহীদ সেরনিয়াবাত সুকান্তকে তার কাছে রাখেন। এরপর মুহূর্তের মধ্যেই শুরু হয় ঘাতকদের বাস্ট ফায়ার। এ সময় আমার গায়ে গুলি লাগলে আমি মাটিতে লুটিয়ে পরি। তখন সাদিককে বাঁচাতে ওকে আমার বুকের মধ্যে চেপে ধরে রাখি।  কিন্তু বুলেটের আঘাতে মারা যায় সুকান্ত।

বাংলা‌দেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
এমএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।