ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনায় চামড়া বেচে রিকশা ভাড়াও উঠছে না!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
খুলনায় চামড়া বেচে রিকশা ভাড়াও উঠছে না! খুলনায় চামড়া বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: সারাদেশের মতো খুলনাতেও কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। অনেকেই বিক্রি করতে না পেরে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার পর এবারই সবচেয়ে কম দামে চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামের এক-তৃতীয়াংশতেও বিক্রি করা যাচ্ছে না চামড়া।

অনেক এলাকাতে চামড়ার ক্রেতাই পাওয়া যাচ্ছে না। কম দামে চামড়া বিক্রি হওয়ায় এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলো প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দাম কম হওয়ায় চামড়া পাচারের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

একসময় চামড়া কেনার জন্য বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। চামড়া কেনা নিয়ে টানাহেঁচড়ার ঘটনাও ঘটতো। এ বছর সে চিত্র আর দেখা যাচ্ছে না।

চামড়ার দাম কম দিয়ে গরিব মানুষকে ঠকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নগরীর লবণচরার আহমদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শেখপাড়া বাজারে চামড়ার দাম নেই। এখানে গরুর পাঁচটি ও ছাগলের একটি চামড়া এনেছিলাম। কিন্তু, ছয়টি চামড়ায় মাত্র সাড়ে চারশ’ টাকা দিয়েছে। এতে রিকশা ভাড়াও ওঠে না।

খুলনার জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন মাদানীনগর মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ধনীরা কোরবানি দিয়ে গোশত খাচ্ছেন আর গরিবের হক চামড়াগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন পানির দরে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্ররা। তাদের অধিকার কেড়ে ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন আর গরিবরা ক্রমে আরও গরিব হচ্ছে।

তিনি বলেন, মাদ্রাসার এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের জন্য কোরবানির পশুর চামড়া আয়ের অন্যতম বড় মাধ্যম। এ চামড়া বিক্রির অর্থে এতিম ছাত্রদের বছরের বেশিরভাগ সময়ের খাবারের সংস্থান হয়। কিন্তু, এবার চামড়ার দাম না থাকায় বড় সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খুলনার লবণচরার আহমদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসার মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মাদ্রাসার জন্য ১৭০টি চামড়া পেয়েছিলাম, যা ঈদের দিনই ট্যানারির গাড়ি এসে নিয়ে গেছে। ওরা পরে দর হিসাব করে টাকা দেবে।

এবছর খুলনাঞ্চলে ছাগলের চামড়ার বলার মতো কোনো দাম নেই। প্রতিটি চামড়া সর্বোচ্চ পাঁচ-দশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী ছাগলের চামড়া কিনতেই চায়নি। যে কারণে অনেকেই ছাগলের চামড়া নদীতে ফেলে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

খুলনাঞ্চলে কাঁচা চামড়া কেনাবেচার সবচেয়ে বড় বাজার শেখপাড়া চামড়া পট্টির ব্যবসায়ীরা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর ট্যানারি মালিকরা কোরবানির আগে পাইকারি ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধ করতেন। কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য তারা আগাম পুঁজিও দিতেন। কিন্তু, এবার ট্যানারি মালিকরা মাঠের ব্যবসায়ীদের খোঁজ নেননি। আগাম পুঁজি দূরে থাক, অনেকের বকেয়াও পরিশোধ করেননি। ফলে ইচ্ছা থাকলেও চামড়া কেনা যায়নি।

চামড়া পট্টির ইয়াসিন লেদারের আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, এবার চামড়া কেনারই আগ্রহ ছিল না। কিন্তু, দোকান খোলা, চামড়া নিয়ে লোকজন আসছে দেখার পর যাকে যে দাম বলছি, টাকা নিয়ে চামড়া রেখে চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এবার গরুর বড় চামড়া ৪শ’ টাকা দিয়েছি। তবে, ছোট গরুর চামড়া একশ’ টাকায়ও কিনেছি।

আমান লেদারের মো. মুন্না বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে লাখ লাখ টাকা পাই। এবার মাত্র ছয়শ’ পিস চামড়া কিনেছি। টাকা নেই, তাই বেশি কিনতে পারিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
এমআরএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।