![]() দাম কম, তাই মনু নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে চামড়া/ |
মৌলভীবাজার: কম দামে চামড়া বিক্রি না করে তা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন মৌলভীবাজার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম কামিল মাদরাসার এক ছাত্র। ঠেলাগাড়িতে করে এনে কয়েকশ চামড়া মনু নদীতে ফেলে দেওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
এদিকে ঈদের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত চামড়া নিয়ে অপেক্ষা করে কোনো পাইকার পাননি মৌলভীবাজারের চামড়া ব্যবসায়ী ও কোরবানিদাতারা। এরই মধ্যে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চামড়াগুলো। বাধ্য হয়ে সহস্রাধিক চামড়া মৌলভীবাজার পৌরসভার বর্জ অপসারণ কর্মীদের কাছে তা তুলে দেন তারা। সেগুলো মাটিতে পুতে ফেলে পৌর কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে মৌলভীবাজার পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় বিক্রি করতে না পারা কয়েকশ চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। রাতে সদর উপজেলার নতুন ব্রিজ এলাকায় মনু নদীতে এরকম শত-শত চামড়া ভাসিয়ে দেন মাদ্রাসা ছাত্ররা।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, এবছর মৌলভীবাজারে ৭টি উপজেলায় প্রায় ৭৬ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। আর স্থানীয় সূত্র বলছে, এরও বেশিসংখ্যক পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার কোরবানিদাতারা কিছু চামড়া বিক্রি করতে পেরেছেন। এর বাইরে কুলাউড়া, রাজনগগর, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় চামড়ার কোনো পাইকার পাননি কোরবানিদাতারা।
কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকার কোরবানিদাতা আব্দুর রউফ চৌধুরী, তাজ খান, মাতাব মিয়া, জামাল হাসান অভিযোগ করে বলেন, আমার চামড়া বিক্রি করে গরিবদের সে টাকা দান করে থাকি। এবছর কোরবানির গরুর কোনো চামড়া বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। যে গরুর চামড়ার দাম অন্যান্য বছর ৩ হাজার টাকা হয়। এই মানের চামড়ার দাম এবার ৫০ টাকা বলছেন ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে ঢাকাস্থ আয়েশা লেদারের কর্ণধার হাসান আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর প্রক্রিয়াজাতকরা চামড়া বিদেশে পর্যাপ্ত রপ্তানি করতে না পারায় আমাদের কাছে তা এখনো মজুদ আছে। এ অবস্থায় চামড়া প্রক্রিয়াজাতের কেমিক্যালের দামও বেড়েছে। যার ফলে চামড়া ব্যবসায়ীরা লোকসানে রয়েছেন। এজন্য এবছর তাদের চাহিদা কম থাকায় পর্যাপ্ত চামড়া ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছেনা। যার ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চামড়ার দরপতন হয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম কামিল মাদরাসার এক ছাত্র চামড়া বিক্রি করতে না পেরে তা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সমালোচনা করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। বিষয়টিকে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হিসেবে দেখছে পরিবেশ অধিদপ্তরও।
অভিযুক্ত ছাত্র বলেন, সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে চাইছে একটি মহল। এই মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম ১৫ টাকা দেবে বলছে। আমি এর প্রতিবাদ জানিয়ে তা ১৫ টাকায় বিক্রি না করে মনু নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি।
পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে পশুর চামড়া ভাসিয়ে দেওয়াটা অন্যায়। এতে পরিবেশ অনেক ক্ষতি হবে। এসব চামড়া পচে যে অ্যামোনিয়া সৃষ্টি হবে, তা পরিবেশ দূষণ করবে। এছাড়া জলজ প্রাণীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা এ কাজ করছে তাদের আমরা সতর্ক করে দেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
এসএইচ