ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুঁজি হারিয়ে চামড়া কিনতে অনীহা ব্যবসায়ীদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
পুঁজি হারিয়ে চামড়া কিনতে অনীহা ব্যবসায়ীদের

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিকাংশ চামড়া ব্যবসায়ী তাদের পুঁজি হারিয়ে ভালো নেই। ট্যানারি মালিকদের কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া, মূলধন সঙ্কট আর ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় এ ঈদে কাঁচা চামড়া কেনা নিয়ে আগ্রহ নেই তাদের। 

এতে করে অনেক মুসল্লি নিজ উদ্যোগে কোরবানির চামড়া আড়তগুলোতে পৌঁছে দিয়েছেন বাকিতে। আর যারা এ পদ্ধতি অনুসরণ করেননি তারা কোরবানির চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন।

এ অবস্থায় অধিকাংশ চামড়া নষ্ট ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মে সীমান্ত দিয়ে পাচারের আশঙ্কা করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।

চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, ১০ বছর আগেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চামড়ার আড়ৎ ছিল ৭০-৯০টির মতো। এখন সে সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৩টিতে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এসব চামড়ার আড়ত জমজমাট থাকলেও এবার নেই কোনো তোড়জোড়। চামড়া কেনার আগ্রহ না থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করছেন তারা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, এখানকার কাঁচা চামড়া তারা বিক্রি করেন নাটোর ও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে। কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরে তাদের কাছে পাওনা রয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। এতে পুঁজি হারিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন তারা। সুবিধা পাচ্ছেন না ব্যাংক ঋণেরও। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের কাঁচা চামড়া কেনার আগ্রহ না থাকায় অনেকেই কোরবানির চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

অনেকেই কোরবানীর পশার চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলছেন।  ছবি: বাংলানিউজ

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের পর থেকে বাড়িতে কোনো চামড়ার ক্রেতা না আসায় বাধ্য হয়েই চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছি।

অন্যদিকে, একই এলাকার মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের পরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে চামড়া বিক্রি পারিনি। চামড়ায় দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে বাড়ির পাশে গর্ত করে মাটি চাপা দিয়েছি।

জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সত্রাজিতপুর এলাকার পুরাতন চামড়া ব্যবসায়ী রাজিব হোসেন রাজু বাংলানিউজকে জানান, নাটোর ও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে তার পাওনা ১০ লাখ টাকা। তারা টাকা তো দেয়ই না উল্টো এ বছর আবার তাদের চামড়া না দিলে বকেয়া টাকা দেবে না বলে হুমকি দেয়।

জেলা শহরের নিমতলার চামড়া ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা রয়েছে ৬০ লাখ টাকা। ঈদের আগে বকেয়া দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কোনো টাকা দেয়নি। তাই এবার আর চামড়া কিনবো না।  

এ ব্যাপারে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মুঞ্জুর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ট্যানারি মালিকদের কাছে জেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ৫/১০ শতাংশ টাকা দিলেও ২০১৮ সালের দেওয়া চামড়ার কোনো টাকাই দেয়নি ট্যানারি মালিকেরা। এছাড়া ব্যাংক ঋণ না পেয়ে ব্যবসায়ীরা পুঁজি সঙ্কটে পড়ায় নতুন করে পুঁজি তারা লাগাতে চায়নি।

৫৯ বিজিবি’র ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মির্জা মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চামড়ার দাম না থাকায় সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার রোধে সব বিওপিকে কড়া নজরদারি ও সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। জেলার কোনো জায়গা থেকে সীমান্তের দিকে কোনো যানবাহন চামড়া নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তা আটক করে আইনানানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের অধীনে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে চামড়া পাচার রোধে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জেলা পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঈদের দিন চামড়া সংগ্রহের পর এক সপ্তাহের মধ্যেই এর প্রাথমিক কাজ শেষ করতে হবে ব্যবসায়ীদের। এরপর ২০-২২ আগস্টের মধ্যে জেলার সব চামড়া ঢাকা ও নাটোরের মোকামগুলোতে পাঠিয়ে দেবেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ঈদের দিন সকাল থেকে কেউ চামড়া বোঝাই পরিবহন নিয়ে সীমান্ত অভিমুখে যেতে পারবেন না।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলায় ১ লাখ ৫৪ হাজার পশু কোরবানি হয়েছিল। এবার পশু কোরবানির টার্গেট নির্ধারণ করা হয় প্রায় ১ লাখ ৫৮ হাজার।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।