ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছাগলের চামড়া মূল্যহীন, গরুরটা কিনতেও অনীহা পাইকারদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
ছাগলের চামড়া মূল্যহীন, গরুরটা কিনতেও অনীহা পাইকারদের

ব‌রিশাল: বরিশালের স্থানীয় পাইকার বাজারেও চামড়ার আশাব্যঞ্চক দর পাচ্ছেন না মাঠপর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। ফলে বরিশাল নগরের পদ্মাবতী এলাকার পাইকারি চামড়ার বাজার থেকে অনেকেই ফিরে গেছেন হতাশ হয়ে।

পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের চামড়া সংগ্রহে ট্যানারি মালিকরা একপ্রকার অনুৎসাহিত করছে। সেজন্য তারা চামড়া কিনতে ভরসা পাচ্ছে না।

 

বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শাহিন বলেন, ট্যানারি মালিক বা ব্যবসায়ীদের কাছে বরিশালের চামড়া ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে।  প্রতিবছর কোরবানির পূর্বে কিছু টাকা ট্যানারি ব্যবসায়ীরা দিলেও এবারে খালি হাতেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই নতুন করে দেনাগ্রস্ত হতে রাজি হননি অনেকেই। এজন্য তিনিসহ বহু ব্যবসায়ী এবার চামড়া কেনা থেকে বিরত রয়েছেন।

তিনি বলেন, বরিশালে ২০/২২ জন চামড়ার পাইকার ব্যবসায়ী ছিলেন। যারা স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাতেন। কিন্তু দিনে দিনে চামড়ার দর পতন অব্যাহত থাকায় এবং ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা আটকে যাওয়ায় সর্বশেষ চামড়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭/৮ জনে। যারমধ্যে এবারে মাত্র ৩/৪ জনে চামড়া সংগ্রহ করছেন। ফলে স্থানীয় বাজার থেকে আমাদের চামড়া সংগ্রহের পরিমাণ কমে গেছে।

পদ্মাবতীর পাইকার চামড়া ব্যবসায়ী নাসির বলেন, এবারে তিনিসহ ৩/৪ জন চামড়া সংগ্রহ করছেন। ট্যানারি মালিকরা বকেয়ার টাকা না দেয়ায় স্থানীয়ভাবে ধার-দেনা করে খুচরা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন।  

তিনি বলেন, কোরবানির দিন বিকেল থেকেই অনেকেই চামড়া নিয়ে আসছেন, যাদের মধ্যে মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজনই বেশি। তবে দর শুনে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। তারপরও যারা চামড়া বিক্রি করছেন, তাদের আমরা সন্তুষ্ট করতে পারছি না। আবার যারা পরিচিত তাদের সংগৃহিত চামড়া রেখে ঠিকই দিচ্ছি, কিন্তু টাকা দেওয়ার বদলে বাকীর খাতায় লিখে রাখছি।  

ঢাকা থেকে আমাদের চামড়া না কেনার জন্যই একপ্রকার উৎসাহিত করা হচ্ছে দাবি করে এ ব্যবসায়ী বলেন, এ কারণে যেখানে বিগত সময়ে ১০ হাজার পিস চামড়া কিনতাম সেখানে এবারে ৪ হাজার পিসের ওপরে কেনার ইচ্ছে নেই।  

তিনি বলেন, বর্তমানে আকার-আকৃতি ভেদে গরুর চামড়া প্রতি ২ থেকে ৩ শ টাকার ওপরে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না কাউকে। আর ছাগলের চামড়া তো টাকা দিয়ে কেনাই সম্ভব না।

তিনি আরো বলেন, লবণ দিয়ে প্রাথমিক সংরক্ষণ কার্যক্রম শেষ হলে আমাদের একটি গরুর চামড়ার পেছনে আরো ৩শ টাকা খরচ হয়। কিন্তু ঢাকা যে দর বলছে তাতে আমাদেরও লোকসান গুণতে হতে পারে। আর ছাগলের চামড়া প্রতি ৪০ টাকার ওপরে দিতে চাচ্ছে না ট্যানারি মালিকরা, তাহলে সে চামড়া স্থানীয়ভাবে কিনে লবণ দিয়ে প্রসেসিং করাটাই বোকামি হবে। তাই ছাগলের চামড়া যারা নিয়ে আসছেন তারা ফেলে রেখে যাচ্ছেন। আমরাও এগুলোর পেছনে শ্রমিক খাটাচ্ছি না। শেষ পর্যন্ত এগুলো ফেলে দিতেই হবে।

এদিকে পদ্মাবতী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেকটাই ফাঁকা চামড়াপট্টি এলাকায়, মাঠ পর্যায় থেকে যারা চামড়া সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবে কিছু খেটে খাওয়া মানুষ একটি দু’টি চামড়া নিয়ে এখানে আসছেন। আর পুরো বাজারে বেশিরভাগ চামড়াই মাদ্রাসা ও এতিমখানার পক্ষ থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে বিক্রির জন্য।  

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকার বাজারে ২ থেকে ৩শ টাকা গরুর চামড়ার দর হওয়ায়, মাঠ পর্যায়ে ১২০ থেকে ১৮০ টাকার ওপরে চামড়ার দর ওঠেনি। তাই এবারে বেশিরভাগ কোরবানিদাতা মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নগদ টাকার বদলে সরাসরি চামড়া দিয়ে দিয়েছেন। তারপর যে সব মাদ্রাসা ও এতিমখানা বেশি চামড়া সংগ্রহ করতে পারেননি, তাদের সারাদিনের শ্রমের মজুরিই উঠবে না।  

এদিকে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাইকারদের চামড়া কেনার প্রতি অনীহার কথাও জানিয়েছেন অনেকে।

বাংলা‌দেশ সময়: ০১১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
এমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।