ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গাদের ঈদ আনন্দ

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৯
রোহিঙ্গাদের ঈদ আনন্দ নাগরদোলায় বসা তিন রোহিঙ্গা শিশু। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দ্বিতীয়বারের মতো বিদেশের মাটিতে উদযাপন করলো ঈদুল আজহা।

সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা শিবিরের প্রায় আটশো মসজিদে উৎসবমুখর পরিবেশ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন লাখো রোহিঙ্গা।

এদিকে, কোরবানির আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার পশু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, দিন দিন ক্যাম্পের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের আত্মসামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন হচ্ছে।

তিনি বলেন,  এবার ক্যাম্পগুলোতে গতবারের চেয়ে প্রায় এক হাজার বেশি গরু বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও আমরা জেনেছি, অনেক রোহিঙ্গা ভাগাভাগি করে গরু কিনে কোরবানি দিয়েছে। ‘একটি ভালো দিক হচ্ছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এমন কোনো শিশু চোখে পড়েনি যার গায়ে নতুন জামা নেই। ’ যোগ করেন কালাম।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ক্যাম্প ইনচার্জরা এসব মাংস বিতরণের দায়িত্ব পালন করেছেন।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এর চেয়ারম্যান মো. মুহিব উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে যখন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে তখন রমজান মাস ছিল।  

সেদিনের রোহিঙ্গাদের দুঃখ-কষ্টের কথা মনে পড়লে এখনো চোখে পানি চলে আসে। তবে আল্লাহর রহমতে এখন অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমরা আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছি। আমাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ।
‘উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া এমন কোনো রোহিঙ্গা নেই, যে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেনি। আর কমবেশি সবাই কোরবানির মাংস পেয়েছে’। যোগ করেন মুহিব।

শিশুদের ঈদ আনন্দ-কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং-এর ডি-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঠে হাজারো শিশু মেতেছে ঈদ আনন্দে। নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদ আনন্দে মেতেছে এসব শিশুরা।

মেলার মতো বসেছে ছোট ছোট দোকান বসেছে ক্যাম্প এলাকায়। বিশেষ করে মাঠজুড়ে নাগরদোলাকে ঘিরেই দেখা গেলো শিশুদের বেশি কৌতুহল।

 ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে খালার সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে তসলিমা। তসলিমার বয়স এখন ১১ বছর। তসলিমা বলে, ঈদের জন্য ৫০ টাকা জমিয়েছি। সেই টাকা দিয়ে নাগরদোলায় চড়ার জন্য এখানে এসেছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মাত্র কুতুপালং ক্যাম্পে নয়, উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবার বাড়তি আনন্দ-বিনোদনের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করেছে রোহিঙ্গারা।

কুতুপালং ক্যাম্প-৪ এর প্রধান মাঝি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, গত দুই বছরে রোহিঙ্গাদের অবস্থা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের অনেকেই সেই ভয়ানক স্মৃতি ভুলতে বসেছে। যে কারণে এবারের ঈদ গতবারের চেয়ে অনেক আনন্দের হয়েছে সবার জন্য।

রোহিঙ্গা মাঝি জোর মুল্লক বাংলানিউজকে বলেন, গত রমজানের ঈদে খুব বৃষ্টি ছিল। এবার বৃষ্টি কম। তাই গতবারের চেয়ে এবারের ঈদে আনন্দ একটু বেশি।  

উখিয়ার ইউএনও মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মতে, প্রয়োজন মতো রোহিঙ্গাদের মধ্যে গরুর মাংস বন্টন করে দেওয়া হয়েছে। আশা করি অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের ঈদ তাদের অনেক ভালো কাটবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৯
এসবি/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।