ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাগুরায় পশুর হাটে নেই ক্রেতা, লোকসান আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৯
মাগুরায় পশুর হাটে নেই ক্রেতা, লোকসান আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা হাটে ক্রেতা সংকটে বিক্রেতারা। ছবি: বাংলানিউজ

মাগুরা: মাগুরায় হাটে পশু উঠলেও এখনো জমে ওঠেনি বেচাকেনা। সে কারণে লোকসান আতঙ্কে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর স্থানীয় খামারিদের হাতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মোটাতাজা করা দেশীয় গরুতে ভরা মাগুরা কোরবানির পশুর হাটগুলো। 

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরের কারণে অনেক খামারি এবার গরু নিয়ে ঢাকায় যাননি। একই কারণে পশু হাটগুলোতে ভিড় নেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ঢাকামুখী ব্যাপারিদেরও।

যে কারণে ক্রেতার অভাবে ন্যায্য দাম না পেয়ে জেলার গরু খামারিরা পড়েছেন লোকসানের মুখে।  

প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ বছর কোরবানি উপলক্ষে জেলার চাহিদার তুলনায় বেশি পশু উৎপাদন হয়েছে। তবে খামারিরা কিছুটা হলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, জেলার চার উপজেলায় কোরবানি উপলক্ষে এ বছর সাড়ে ১০ হাজার খামারে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রায় ৩৬ হাজার গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। যেখানে জেলার কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ৩৪ হাজার। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তদারকিতে প্রতিটি খামারে ক্ষতিকারক ওষুধ ছাড়াই দেশীয় খাবারের মাধ্যমে এ সব গরু মোটা তাজা করা হয়েছে। তবে প্রতি বছর জেলার প্রায় কয়েকশ’ খামারি মোটাতাজা করা গরু নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে থাকেন। কেউ-কেউ যান সিলেট ও চট্টগ্রামে। আবার দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারিরা আসেন মাগুরার পশু হাটগুলো থেকে দেশীয় উপায়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মোটাতাজা করা গরু কিনে তা ঢাকার কোরবানির হাটগুলোয় বিক্রির উদ্দেশে।

কিন্তু এ বছর ডেঙ্গুর কারণে স্থানীয় খামারিরা যেমন গরু নিয়ে ঢাকামুখী হচ্ছেন না। তেমনি অন্য জেলা থেকে আসা ব্যাপারিদেরও তেমন একটা দেখা মিলছে না। যে কারণে জেলা কোরবানির পশুর হাটগুলো স্থানীয় গৃহস্থ ক্রেতা নির্ভর হয়ে পড়েছে।

হাটে ক্রেতা সংকটে বিক্রেতারা।  ছবি: বাংলানিউজসদরের আলোকদিয়া এলাকার বাপ্পি খান বলেন, তিনি প্রতি বছর গরু নিয়ে ঢাকায় যান। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের ভয়ে এবার যাননি। তিনি পাঁচটি গরু নিয়ে রামনগর হাটে এসেছেন। কিন্তু তার দেড় লাখ টাকার গরুর দাম হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। যে টাকা ব্যয় করে সারাবছর খাবার কিনে গরু মোটা তাজা করেছেন, তাতে করে তার খরচের পয়সা উঠবে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
 
ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে ১০টি গরু নিয়ে রামনগর হাটে আসা মিলন মিয়া নামে এক খামারি বলেন, ডেঙ্গুর কারণে এবার গরু নিয়ে ঢাকায় যাইনি। কিন্তু ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে প্রতি গরুতে তার ২৫-৩০ হাজার টাকা লোকসান হবে।  

বাপ্পি খান, মিলন মিয়াসহ ৫-৬ জন খামারির সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ডেঙ্গু জ্বরের কারণে তারা যেমন ঢাকায় যাননি। তেমনি একই কারণে কোরবানি উপলক্ষে ঢাকায় বিক্রির জন্য সারাদেশ থেকে যে সব ব্যাপারিরা মাগুরায় গরু কিনতে আসেন এবার তারাও আসেননি।  

অন্যদিকে বিগত বছরের তুলনায় এবার জেলার হাটগুলোতে দেশি 
গরুর আমদানি দ্বিগুণ। বাইরের ব্যাপারিরা না আসায় মাগুরার কোরবানির পশুর হাটগুলো স্থানীয় ক্রেতা নির্ভর হয়ে পড়েছে। যে কারণে বিক্রি কম হওয়ার পাশাপাশি দামও পড়ে গেছে।

মাগুরা শহরের স্থানীয় দুই ক্রেতা রুবেল মীর ও জাহিদ হোসেন বলেন, তারা কোরবানির হাটে গরু কিনতে এসেছেন। এবার হাটগুলোতে দেশি গরু ভরা, দামও নাগালের মধ্যে। তাই তারাসহ স্থানীয় ক্রেতারা দাম দর করে একটু সময় নিয়ে গরু কিনতে পারছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এবার জেলার সাড়ে ১০ হাজার খামারে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রায় ৩৬ হাজার গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। যেখানে জেলার চাহিদা প্রায় ৩৪ হাজার। জেলার ১৯টি পশু হাটে দেশীয় প্রজাতির এসব গরু বিক্রি হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের ১১টি টিম এ হাটগুলো তদারকি করছে। তবে এবার খামারিরা গরুর ভাল দাম পাচ্ছেন না বলে তিনি স্বীকার করেন।

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি হাটে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। শুধু পোশাকধারী নয়, সাদা পোশাকের পুলিশও জেলার পশু হাটগুলোতে কাজ করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।