ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদযাত্রায় লঞ্চে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৯
ঈদযাত্রায় লঞ্চে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ ফাইল ফটো

ঢাকা: ঈদযাত্রায় যাত্রীসেবা বাড়াতে সদরঘাটসহ দেশের সব নৌবন্দরগুলোকে ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে ছিটানো হচ্ছে মশা মারার ওষুধ। একই সঙ্গে, লঞ্চে মোটরসাইকেল বহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব-উল-ইসলাম। 

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) তিনি বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।  

কমডোর এম মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, ঈদযাত্রায় রাজধানীর সদরঘাটসহ দেশের নৌবন্দরগুলো ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে রাখতে প্রতিটি লঞ্চে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

গত সোমবার (৫ আগস্ট) থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিআইডাব্লিউটিএর এক যুগ্ম-পরিচালকের নেতৃত্বে দল গঠন করে তদারকি করা হচ্ছে। যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ক্যাম্প স্থাপনসহ টার্মিনালে অ্যাম্বুলেন্স রাখা হবে। এবারও যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের সময় লঞ্চে মোটরসাইকেল পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত রোজার ঈদেও এটি করা হয়েছিল। এখন থেকে এ নিষেধাজ্ঞা প্রতি ঈদের জন্য কার্যকর থাকবে।  

তিনি বলেন, প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। তবে এবার চাপ আরও বেশি। কারণ, বন্যায় রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পানি বাড়ায় অনেকেই নৌপথে স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারবেন। এছাড়া, গত রোজার ঈদের সময় নৌপথ স্বস্তিদায়ক হওয়ায় এবার চাপ বেশি পড়ছে। আমরাও সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। লঞ্চের ফিটনেসের ভিত্তিতের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এবছর নতুন পুরনো মিলিয়ে পাঁচটি লঞ্চ বাড়ানো হয়েছে। এগুলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, চাঁদপুর ও পায়রা নৌবন্দর রুটে যাতায়াত করবে।  

বৈরি আবহাওয়ার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বলেন, গত দুই দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ফিটনেস, বাতি, পর্যাপ্ত বয়া রয়েছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করে টার্মিনাল থেকে লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রী যাতে লঞ্চে উঠতে না পারে, সেদিকে নজরদারি রয়েছে। এজন্য আমাদের নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।  

তিনি বলেন, আমরা এবারই প্রথম নৌবন্দর সিনিয়র সিটিজেন, গর্ভবতী মা, প্রতিবন্ধীদের জন্য টোল ফ্রি করা হয়েছে। তাদের লঞ্চে ও বন্দরে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রাও গত ঈদের মতো স্বস্তিদায়ক হবে।

এদিকে, গত জুন মাসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ৩৬টি নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য ঢাকাসহ সারাদেশের নদীবন্দরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বন্দর ও পরিবহন বিভাগ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসন/বিআইডব্লিউটিএ), নৌ-পরিবহন অধিদফতর, পরিবহন পরিদর্শক, লঞ্চ মালিক সমিতি, নৌ-পুলিশ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বন্দর ব্যবস্থাপনা কমিটি, ডিএমপি, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ প্রশাসনকে এসব নির্দেশনা পালন করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।  

নির্দেশনাগুলো হলো- ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বন্দর সমন্বয় কমিটিকে মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করতে হবে। বন্দর সমন্বয় কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব দফতরে প্রতিনিধির নাম ও মোবাইল নম্বর যুগ্ম-পরিচালকের কাছে ঢাকা নদীবন্দর দফতরে পাঠাতে হবে। প্রতিটি লঞ্চের উপযুক্ত মাস্টার ও ড্রাইভারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। মাস্টার ও ড্রাইভারদের ইউনিফর্ম পরতে হবে। সার্ভে অনুযায়ী সব শর্ত পূরণ করে টার্মিনালে লঞ্চ বার্দিংসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদি ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র মজুদ রাখতে হবে।

যাত্রীসংখ্যা অনুপাতে অতিরিক্ত বয়া, লাইফ জ্যাকেট/র‌্যাফটের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কোনো লঞ্চ মাঝ নদীতে রাখা যাবে না। নৌকায় করে লঞ্চে ওঠা বন্ধ করতে হবে। ঈদের সময় যাত্রীবাহী লঞ্চের ওভারলোডিং রোধে ধারণ ক্ষমতার সমসংখ্যক যাত্রী বোঝাই হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনে নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চঘাট ছাড়তে করতে হবে। ঈদের সময় যাত্রীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে বন্দর সমন্বয় কমিটি প্রয়োজনবোধে স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিসের ব্যবস্থা নেবে। ১৪টি প্রবেশপথে যাত্রী নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি, বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে ডিইপিটিসির ক্যাডেট ও বিএনসিসি স্বেচ্ছাসেবকরা যৌথভাবে কাজ করবে। লঞ্চের ছাদে যাত্রী ওঠার সিঁড়ি অপসারণ করতে হবে ও লঞ্চের ছাদ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। বন্দর ত্যাগ করার অন্তত এক ঘণ্টা আগে লঞ্চের তলদেশ পানিরোধক অবস্থায় বন্ধ করতে হবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বন্দর নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার নির্দেশ মোতাবেক লঞ্চ পরিচালনা করতে হবে। ঈদের সময় প্রতিটি লঞ্চের মালিক বা তার উপযুক্ত প্রতিনিধিকে বন্দর মনিটরিং কক্ষে উপস্থিত থাকতে হবে। কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ভাড়ার বেশি ভাড়া আদায় করা যাবে না। কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।  

ঈদের আগে সব লঞ্চের টিকিট অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, বিশেষ করে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে ঢাকা নদীবন্দর পর্যন্ত রাস্তাটি সবসময় একমুখী রাখাসহ ফুটপাত অবমুক্ত রাখতে হবে। এছাড়া, সদরঘাট থেকে বাদামতলী ও ফরাশগঞ্জ, লালকুঠি হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তার চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। ওয়াইজঘাটে যাত্রী চলাচলের সুবিধার্থে মূল টার্মিনাল থেকে ওয়াইজঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি হকারমুক্ত রাখতে হবে ও ওয়াইজঘাট টার্মিনালের দুটি গ্যাংওয়ে সম্পূর্ণ চালু রাখতে হবে।

ঈদ উপলক্ষে লঞ্চে মালামাল বহন বন্ধ করতে হবে। যাত্রী বসার স্থানে কোনোভাবেই মালামাল বহন করা যাবে না। ঈদে যাত্রীদের লঞ্চের অবস্থান জানানোর জন্য বাটা ক্রসিং থেকে লালকুঠি ও ওয়াইজঘাট পর্যন্ত মাইকিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঈদের সময় যেকোনো দুর্ঘটনায় যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে বিআইডব্লিউটিএর একজন চিকিৎসক নিয়োজিত থাকবে।  

পন্টুন, গ্যাংওয়ে, টার্মিনাল ভবন ও পার্কিং ইয়ার্ডসহ বন্দর এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। বরিশালগামী লঞ্চ নির্ধারিত স্থান ১, ২ ও ৩ নম্বর পন্টুনে বার্দিং করবে এবং ছেড়ে যাবে। হুলারহাট-ভাণ্ডারিয়াগামী লঞ্চগুলো ৫ ও ৬ নম্বর, ঝালকাঠি, মাদারীপুর ৪ নম্বর, রায়েন্দা, গোমা, মুলাদী, ভাষানচর ৭ নম্বর, সবুজবাগ, আমতলী, পয়সারহাট, রবগুনা ৮ নম্বর, লালমোহন বেতুয়া, কালাইয়া ৯ নম্বর, হাতিয়া মাস্টারহাট, দৌলতখাঁ, ১০ নম্বর, বোরহানউদ্দিন, পাতারহাট, ভোলা ১১ নম্বর, ভোলা, লেতরা, ঘোষেরহাট ১২ নম্বর, রাঙ্গাবালী, টরকীগামী ১৩ নম্বর পন্টুনে বার্দিং করবে এবং ছেড়ে যাবে। সুরেশ্বর, ওয়াপদা, দুলারচর, বালাবাজারগামী লঞ্চ ১৩ নম্বর পন্টুনে বার্দিং করবে এবং ছেড়ে যাবে। গ্রীন লাইন (ডে-সার্ভিস), চাঁদপুরগামী লঞ্চ ও বিআইডব্লিউটিসির রকেট/স্টিমার লালকুঠি ঘাটে বার্দিং করবে এবং ছেড়ে যাবে। পটুয়াখালী, গলাচিপাগামী নৌযানগুলো ওয়াইজঘাট (৪ নম্বর ঘাট) থেকে ছেড়ে যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৯ 
জিসিজি/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।