ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ঐতিহ্যবাহী হরগঙ্গা কলেজের ভবনে ফাটল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৯
ঐতিহ্যবাহী হরগঙ্গা কলেজের ভবনে ফাটল ফাটল ধরা ভবন। ছবি: বাংলানিউজ

মুন্সিগঞ্জ: ১৯৩৯ সালে নির্মিত মুন্সিগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের ৮০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে, হেলেও পড়েছে। যেকোন সময় ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে মুন্সিগঞ্জ সদরের কলেজপাড়া এলাকায় অবস্থিত এই কলেজটিতে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের পাশে অবস্থিত নতুন শ্রেণি কক্ষটির সামনের রাস্তা ভেঙে গেছে। ঐতিহ্যবাহী দুইতলা ভবনটিতে এক পাশের অংশে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।

 

এছাড়া পৃথক শ্রেণি কক্ষটিও হেলে পড়েছে, কলেজ রোভার স্কাউটের অফিস কক্ষটির তলদেশে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। যেকোন সময় পাশের পুকুরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

হরগঙ্গা কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা নিরাপদ অবস্থানে দাঁড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী কলেজ ভবনটি প্রত্যক্ষ করছেন। দীর্ঘদিন ধরেই কলেজের পাশে পানি আসছিল বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।  

কলেজ শিক্ষার্থীরা জানান, জেলা স্টেডিয়ামে বালু ভরাটের কাজ চলছিল। পানি নিষ্কাশনের জন্য কলেজের পুরাতন ভবনের পেছনে রাস্তা করে দেওয়া হয়। ফলে পানির প্রচণ্ড চাপে পুরাতন ভবন, শ্রেণিকক্ষ, রোভার স্কাউট কক্ষ হেলে পড়েছে এবং ফাটল দেখা দিয়েছে। এই তিনটি ভবনের পাশের রাস্তাটিও ভেঙে গেছে।  

ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা বাংলানিউজকে জানান, ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের প্রতিষ্ঠাকালের ভবনটি ভেঙে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে অনেক কষ্ট লাগছে। হঠাৎ করে আজকে ভবনটিতে এভাবে ফাটল ধরে। যদি ক্লাস পরিচালনাকালে এ অবস্থা হতো তাহলে হয়তো খারাপ কিছু  হতে পারতো। আশাকরি কলেজ প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।  

মুন্সিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে দুপুর ২টায় ঘটনাস্থলে আসে তারা। ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিউল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে পুরাতন ভবনটির তলদেশে খাদের মতো কিছু আছে। প্রচণ্ড গতিতে পানি প্রবেশের কারণে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

ফাটল ধরা ভবন।  ছবি: বাংলানিউজজেলা স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে কলেজে পানি প্রবেশের রাস্তা মাটি দিয়ে ভরাট করছেন শ্রমিকরা। একাধিক প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদার মো. রাসেল কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।  

কলেজটির ভাইস প্রিন্সিপাল নাসিমা আহমেদ জানান, হরগঙ্গা কলেজটির ঐতিহ্য সবার চোখের সামনেই শেষ হয়ে গেল। প্রতিষ্ঠাকালের এই ভবনটিতে রয়েছে বিশেষায়িত কম্পিউটার রুম, তিনটি বিভাগের অনার্স ও মাস্টার্স এর শ্রেণিকক্ষ, ব্যবহারিক রুম। রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম পরিচালনা করার শিক্ষা উপকরণ। কম্পিউটার রয়েছে ৫০টির মতো।  

তিনি আরও জানান, পুরাতন ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কলেজটির পাশেই অবস্থিত জেলা স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ চলছিল। স্টেডিয়াম থেকে পানি পুরাতন ভবনটির পাশে জমা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। একপর্যায়ে জমে থাকা এসব পানির চাপে ভবনের তলদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ভবনটিতে ফাটল ধরে হেলে পড়েছে। পাশের শ্রেণিকক্ষ ও রোভার স্কাউটের কক্ষটিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।  

স্টেডিয়ামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কলেজ কর্তৃপক্ষকে অবগত না করে এ কাজটি করেছে। এ অবস্থায় কীভাবে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে সেই বিষয়ে চিন্তিত সবাই। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এ বিষয়ে একটি জরুরি সভা ডাকা হয়েছে বলে জানান তিনি।  

বিকেলে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদারসহ একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তারা জানান, সরকারি হরগঙ্গা কলেজের পুকুরে শিক্ষা প্রকৌশল সংস্কারমূলক কাজ চলছিল। বাউন্ডারি দেয়াল তৈরির জন্য পুকুরের পানি পুরাতন ভবনের পেছনে সরানো হয়। স্টেডিয়াম থেকে আসা পানি, বৃষ্টির পানি পুকুরের প্রবেশের জন্য চাপ তৈরি হতে থাকে। একপর্যায়ে পুরাতন ভবন তলদেশের মাটি সরে গিয়ে প্রচণ্ড চাপ আর গতিতে পুকুরে প্রবেশ করে। এই কাজটি ভাদ্র মাসে করার কথা থাকলেও বর্ষা মৌসুমে করা হয়।  ফলে এ ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।