ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনার জিআরপি থানায় গণধর্ষণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৯
খুলনার জিআরপি থানায় গণধর্ষণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ওসমান গনি পাঠান।

খুলনা: খুলনার জিআরপি (রেলওয়ে) থানায় তিন সন্তানের জননীকে (৩০) গণধর্ষণের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ ম কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম।

এদিকে, ধর্ষণের শিকার ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দুপুরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ওই নারীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, খুলনা রেলওয়ে থানা হাজতে রেখে ছয় থেকে সাতজন পুলিশ তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও মারধর করে- মর্মে খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং তাকে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য খুমেক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সঠিক তথ্য উদঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ঘটনাটি সরেজমিন অনুসন্ধান করে সুস্পষ্ট মতামতসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী সাত দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের গাইনী চিকিৎসকরা পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। তার বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তবে, প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২ আগস্ট ঘটনার রাতে খুলনা রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) গৌতম কুমার পাল, এসআই নাজমুল হাসান, কনস্টেবল মিজান, হারুন, মফিজ, আব্দুল কুদ্দুস, আলাউদ্দিন, কাজলসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তবে, ওই নারী ওসি ওসমান গনিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগীর বড় বোন জানান, তার বোনের শ্বশুর বাড়ি সিলেটে ও বাবার বাড়ি খুলনার  ফুলবাড়িগেট এলাকায়। তাদের মা খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাকে দেখতে খুলনায় এসেছে বোন। বোন নিজে অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) যশোরে ডাক্তার দেখাতে যান। পরদিন শুক্রবার (৩ আগস্ট) খুলনায় আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অপরাধে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গনি তার বোনকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেন। এরপর আরও চারজন পুলিশ সদস্য তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন বলেও অভিযোগ করেন। পরে শনিবার (৪ আগস্ট) পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ তাকে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।

তিনি আরও জানান, আদালতে বিচারকের সামনে নেওয়ার পর তার বোন জিআরপি থানায় তাকে গণধর্ষণের বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন।

ওসি ওসমান গনি ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, ওই নারীকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ গত ২ আগস্ট আটক করা হয়। সেই মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আদালতে গিয়ে ওই নারী ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। ফেনসিডিলের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ওই নারী এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করেছে বলেও দাবি করেন ওসি ওসমান গনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৯
এমআরএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।