ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনা জিআরপি থানার ওসিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৯
খুলনা জিআরপি থানার ওসিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রতীকী ছবি

খুলনা: খুলনা জিআরপি (রেলওয়ে) থানার ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এক গৃহবধূকে (৩০) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওই নারী নিজেই আদালতে এ অভিযোগ করেছেন।

আদালতের নির্দেশে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য রোববার (৪ আগস্ট) রাতে ওই নারীকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সময়স্বল্পতার কারণে পরীক্ষা হয়নি।

সোমবার (৫ আগস্ট) তাকে আবারও হাসপাতালে নেওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওসি ওসমান গনি মোটা অংকের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় তিনি হুমকি দিচ্ছেন বলেও ওই গৃহবধূর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগীর বড় বোন বাংলানিউজকে জানান, তার বোনের শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। বাপের বাড়ি ফুলবাড়ি গেট এলাকায়। তাদের মা খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাকে দেখতে খুলনায় এসেছে বোন। বোন নিজে অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার যশোরে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিল। শুক্রবার আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অপরাধে থানায় ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গনি পাঠান তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর আরও চারজন পুলিশ সদস্য পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরদিন শনিবার পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ ওকে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করে।
তিনি আরও জানান, আদালতে বিচারকের সামনে নেওয়ার পর তার বোন জিআরপি থানায় তাকে গণধর্ষণের বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরে। তখন আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার ডাক্তারী পরীক্ষার নির্দেশ দেন।

ওসি ছাড়া বাকি চার পুলিশ সদস্যের নাম জানাতে পারেনি ভুক্তভোগীর পরিবার।

সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে এ বিষয়ে ওসমান গনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। ফেনসিডিলের মামলা থেকে রক্ষা পেতে সে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তাকে নারী এসআই ও নারী কনস্টেবল পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। থানায় রাতে আটজন পাহারায় থাকে।  
সেখানে তাকে কীভাবে ধর্ষণ করাহবে, প্রশ্ন করেন ওসি।  

ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসানো ও জিআরপি পুলিশের চাঁদা দাবি প্রসঙ্গে গৃহবধূর ভাই জানান, আমাকে পুলিশ বলে, তোমার বোনকে মোবাইল চুরির জন্য ধরে নিয়ে আসছি। আমি বলেছি, স্যার আমার বোনতো এসব করে না। পুলিশ বলে, এই তুমি বেশি জানো? এই একে ধরো। বোনের সঙ্গে ভাইরেও লকআপে ভরো। আমি বলি স্যার কি বলছেন? তিনি বলে, এই বেশি কথা বলবি না। যা বাসা থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে আয়। আমি বলি, আমরা গরিব মানুষ টাকা পাবো কই? তিনি বলেন, টাকা পাবি কই আমি জানি না। তুই টাকা নিয়ে আয়। তা না হলে ওরে ছাড়বো না।  

এরপর রাত ১০টা পর্যন্ত আমি ওইখানে বসে থাকি। আমাকে অনেক ভয়-ভীতি দেখাইছে। ‘ফেনসি দিমু নয় বাবা দিয়া চালান দিয়া দিমু। ’ যাও বাসায় যাও, ভালো লোক হয়ে থাকলে বাসায় যাও। আমি ভয়ে চলে আসছি। চলে আসার পর ভোর ৬টায় গেছি। যাওয়ার পরে বলে, এদিকে এসো, টাকা আনছো? আমি বলি স্যার আমরা গরিব মানুষ, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। ঠিক আছে এখন ৭ বছর জেল খাটলে.. 

এরপর আমাকে বলে এই ভোটার আইডি কার্ড ফটোকপি করে আনো। আমি আনছি, আনার পরে এবার আমার ছোট বোনকে বের করেছে। আমাকে ফটোকপি আনতে দিয়ে ফেনসিডিল দিয়ে ওরে বের করছে। আমি বলি স্যার এই আনছি। এরপর আমার বোন আমারে জড়িয়ে ধরে বলে, ভাইয়া আমারে পাঁচটি ফেনসিডিল দিয়েছে ব্যাগে। আমি বলি আমাকে ফটোকপি আনতে দিলেন, এখন পাঁচটি ফেনসিডিল দিয়ে চালান দিলেন। এরপর পুলিশ বলে, ‘এই বেডা বেশি কথা কবি না। আমি তখন একা ছিলাম। ভয়ে আমি আর তখন কিছু বলিনি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৯
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।