ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চুরির ঘটনা ফাঁস করায় খুন হন পিকআপ চালক উজ্জল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৯
চুরির ঘটনা ফাঁস করায় খুন হন পিকআপ চালক উজ্জল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, পোশাক, বেলচা, কোদাল জব্দ করেছে পুলিশ

ব‌রিশাল: পাওনা তিনশ টাকা না পেয়ে চুরির খবর ঠিকাদারকে জানিয়ে দেওয়ায় খুন হন পিকআপ চালক মো. উজ্জল (২১)।

যার মরদেহ গত ২ আগস্ট (শুক্রবার) বরিশাল নগরের কাশিপুরে নির্মাণাধীন ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকার কাঁশবনের ভেতরে বালুচাপ অবস্থায় উদ্ধার করে বিমানবন্দর থানা ‍পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পরপরই পুলিশ অভিযানে নেমে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উজ্জল হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান অভিযুক্তসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতাররা হলেন- নির্মাণাধীন ট্রাক স্ট্যান্ডের সাব কন্ডাক্টর ও উজ্জল হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ফুলঝুড়ি এলাকার জালাল হাওলাদারের ছেলে সোহাগ, তার দুই সহযোগী মিনি ট্রাকের হেলপার ও বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের কাজীরহাট এলাকার আনোয়রের ছেলে রমজান এবং নির্মাণ শ্রমিক মাদারীপুরের কালকিনি এলাকার ইদ্রিস ফকিরের ছেলে রবিউল।

রোববার (০৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরের পঞ্চমতলার সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মো. শাহাব উদ্দীন খান জানান, গত ১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাত থেকে নিখোঁজ হন খুন হওয়া পিকআপ চালক উজ্জল। এরপর স্বজনরা তাকে ‍খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে ২ আগস্ট সন্ধ্যায় নিহতের মা পারভীন বেগম নগরের কাশিপুরে নির্মাণাধীন ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকার কাঁশবনের ভেতরে উজ্জলের একপাটি জুতা দেখতে পেয়ে মেট্রোপলিটনের বিমানবন্দর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আলগা বালুর স্তূপ দেখে তা খুঁড়ে উজ্জলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় ওই রাতেই হত্যা মামলা দায়েরের পাশাপাশি থানা পুলিশ তদন্তে নামে। তদন্তের এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন নির্মাণাধীন ট্রাক স্ট্যান্ডের সাব কন্ডাক্টর সোহাগ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। যাকে নগরের আলাকান্দা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পরেই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন হয়, পাশাপাশি নগরের ধান গবেষণা রোড এলাকায় সোহাগের এলাকা থেকে নিহত উজ্জলের ভাড়ায় চালিত পিকআপটি উদ্ধার করা হয়।  

অপরদিকে কিলিং মিশনের সঙ্গে থাকা অপর দুই আসামি রবিউল ও রমজানকে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী নিহত উজ্জল ও গ্রেফতার হওয়া আসামিরা একসঙ্গে চলাফেরা করতো। গ্রেফতাররা নির্মাণাধীন ট্রাক স্ট্যান্ডের কাজের সাইড থেকে বিভিন্ন সময় রড, সিমেন্ট, খোয়াসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি করে উজ্জলের পিকআপ ব্যবহার করে বাইরে বিক্রি করতো। সবশেষ সোহাগের কাছে ট্রাক ভাড়া তিনশ টাকা পেতো উজ্জল। যা না দেওয়ায় উজ্জল তাদের চুরির বিষয়টি মূল ঠিকাদার স্বপনকে দিয়ে দেয়। এরপর ‍মূল ঠিকাদার স্বপন সাব কন্ডাক্টর সোহাগকে তার পাওনা ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আটকে দেয়। এরপর থেকেই মূলত সোহাগ পিকআপ চালক উজ্জলের ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং উজ্জলকে হত্যার উদ্দেশ্যে দুইবার কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টাও করে।

তিনি জানান, সবশেষ ১ আগস্ট উজ্জল ভান্ডারিয়া থেকে ট্রিপ শেষ করে গ্রেফতার সোহাগ ও রবিউলের ফোন পেয়ে ট্রাক টার্মিনালের ভেতরে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে ওঠে। সেখানেই গ্রেফতার হওয়া আসামিরা পরস্পর যোগসাজেশে উজ্জলকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গলাকেটে হত্যা করে। পরে সোহাগের পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী উজ্জলের মরদেহ কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে ভবনের পাশের কাশবনে গর্ত করে বালিচাপা দেওয়া হয়।  

কমিশনার শাহাব উদ্দীন খান বলেন, চুরির তথ্য প্রকাশ ও পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়েই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে গ্রেফতাররা। তারা এ হত্যাকাণ্ডে ছুরি, পোশাক, বেলচা, কোদালসহ যা যা ব্যবহার করেছে সে আলামত আমরা জব্দ করতে পেরেছি।  

সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মোহাম্মদ সালেহ, মো. খায়রুল আলম, সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল হালিম, নাছির উদ্দিন মল্লিকসহ ঊর্ধ্ব কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলা‌দেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৯
এমএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।