ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

যমজ সন্তানে খুশি হলেও দুশ্চিন্তায় পরিবার!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৯
যমজ সন্তানে খুশি হলেও দুশ্চিন্তায় পরিবার! জোড়া লাগানো শিশু। ছবি: বাংলানিউজ

নরসিংদী: নরসিংদীতে পেট ও বুক জোড়া লাগানো শিশুর জন্ম হয়েছে। এক সঙ্গে দুই সন্তান পেয়ে খুশি হলেও তাদের চিকিৎসার কথা চিন্তা করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পরিবার। 

হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় নিয়ে শিশুদের পরিচর্যা করা হচ্ছে শিশুদের। যমজ ও জোড়া বাচ্চা জন্মের খবরে তাদের দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক গ্রামবাসী।

 

জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে বেলাবো উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের আঙ্গুর মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে নরসিংদী রায়পুর উপজেলার ডৌকারচর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের রিকশাচালক আব্দুল হামিদ মিয়ার মেয়ে সুমি আক্তারের বিয়ে হয়। এরই মধ্যে গত ২৪ জুলাই বুধবার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে যমজ সন্তানের (ছেলে) জন্ম দেয় সুমি। জন্মের সময়ই দেখা যায় শিশু দুইটি জোড়া লাগানো। দুইটি শিশুর মাথা ও কাঁধের নিচ থেকে পেট পর্যন্ত জোড়া লাগানো। শিশু দু’টির নাক, কান, মুখসহ মাথা এবং ৪টি হাত, ৪টি পা ও দুইটি মাথা সম্পূর্ণ আলাদা রয়েছে। খাবারও খাচ্ছে আলাদাভাবে। চার দিন হাসপাতালে রাখার পর শনিবার শিশুদের নানাবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। জোড়া অবস্থায় জন্ম নেওয়ায় ওই শিশুদের ব্যয় ভার বহনের কথা চিন্তা করে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র পরিবারটি।  

নবজাতকের নানি নাসিমা বেগম বলেন, জোড়া ও জট সন্তান ভূমিষ্টের খবরে প্রতিদিনই নানা ধরনের লোকজন বাড়িতে আসছে। এখন আমরা ভয়ে আছি। চিকিৎসা না করিয়ে বাসায় কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে যদি বাচ্চা দুইটিকে রেখে দেয়। সেই ভয়ে বাসায় রেখে স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।

নবজাতকের বাবা ইসমাইল মিয়া বলেন, আল্লাহ আমাকে যমজ সন্তান দেওয়ায় আমি খুশি। আমি তাতে নারাজ না। আল্লাহতায়ালা ভালো বুঝেই হয়তো পাঠিয়েছেন। তবে আমার যে আর্থিক অবস্থা তাতে এই সন্তানদের সুচিকিৎসা করা আমার জন্য বড়ই কঠিন।  

শিশু দুইটিকে আলাদা করতে না পারলে তাদের খুব কষ্ট হবে। তাই দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন ইসমাইল মিয়া।  

অস্ত্রোপচারের পর খানিকটা অসুস্থ নবজাতকের মা সুমি আক্তার। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। একদিকে নিজের অসুস্থতা অন্যদিকে জোড়া লাগানো সন্তান। সবমিলিয়ে অনেকটা বিমর্ষ তিনি।  

সুমি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমার বাবা রিকশাচালক। স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এই সন্তানদের আলাদা করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হবে তা আমাদের নেই। তাই কীভাবে তাদের বাঁচিয়ে রাখবো সে চিন্তায় মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি সবার সহযোগিতা চাই।
 
রায়পুরা ডৌকারচর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ ফরাজি বলেন, পরিবারটা খুবই দরিদ্র। তাই এ ব্যাপারটি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। কীভাবে তাদের চিকিৎসা হবে? আমরা স্থানীয়ভাবে শিশু দুইটিকে বাঁচিয়ে রাখতে কিছু সহায়তা করছি। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে শিশুগুলোকে বাঁচানো সম্ভব।  

নরসিংদীর সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আমিরুল হক শামীম বলেন, শিশু দুইটিকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাদের আলাদা করা প্রয়োজন। যদি শিশু দুইটির শরীরের অরগানগুলো আলাদা থাকে, তাহলে দুইটি শিশুকেই বাঁচানো সম্ভব। তবে সেজন্য তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অথবা পিজি হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। এই জাতীয় চিকিৎসায় অনেক খরচ। প্রয়োজনে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।