ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডেঙ্গুর প্রকোপ: বাড়লো মশার স্প্রে-ব্যাট-কয়েলের দাম

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৯
ডেঙ্গুর প্রকোপ: বাড়লো মশার স্প্রে-ব্যাট-কয়েলের দাম কয়েল বিক্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দামও। ছবি: বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: রাজধানী ঢাকার মতো ময়মনসিংহেও দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। সাধারণ মানুষকে ডেঙ্গু আতঙ্কে পেয়ে বসার কারণে ভীড় বাড়ছে নগরীর হাসপাতালগুলোতে। পাশাপাশি এডিস মশার সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মানুষ হন্য হয়ে ছুটছেন কসমেটিকস, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও ফার্মেসিতে। অভিযোগ উঠেছে, এ সুযোগে মশার স্প্রে, ইলেকট্রিক ব্যাট, কয়েল ও মশারির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।

মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে যে লোশন ব্যবহার করা হয় তাও দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহের ঘাটতির কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা অভিযোগ করেছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো এসব সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে তাদেরকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

ময়মনসিংহ নগরীর গাঙ্গিনারপাড় মোড় এলাকার কয়েকটি কসমেটিকসের দোকান ঘুরে দেখা যায়, মশা মারার সব ব্র্যান্ডের স্প্রের দামই বাড়তি। আগে এসিআই কোম্পানির অ্যারোসল ১৬০ থেকে ৪৩০ টাকায় বিক্রি হলেও গত ১০ দিনে এ উপকরণের বিক্রি বেড়েছে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা প্রতি অ্যারোসলে ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। একই অবস্থা গুড নাইট কোম্পানির মর্টিন অ্যারোসল বিক্রিতেও। ২৯০ থেকে ৩৪০ টাকার এ অ্যারোসল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

এতো গেলো কসমেটিকসের দোকানের চিত্র। আরও ভয়ানক অবস্থা কনফেকশনারি, ফার্মেসি ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে। এসব দোকানে অ্যারোসলের নির্ধারিত কোনো দামই নেই।

মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে কোনো উপায় না পেয়ে অতিরিক্ত দামেই অ্যারোসল কেনার কথা জানালেন নগরীর নতুন বাজার এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।  অনেকেই কয়েল, মশার স্প্রে’র দাম বেশি রাখছেন।  ছবি: বাংলানিউজ দাম বেড়েছে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ায় ব্যবহৃত ক্রিম ওডোমসের। কথিত আছে, ওডোমস মশার যম। এ ক্রিম শরীরে মেখে ঘুমালে মশা কামড় দিতে পারে না। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে ময়মনসিংহের কোনো কসমেটিকস বা ওষুধের দোকানেই এ ক্রিমের দেখা মিলছে না। ১০ দিন আগেও এ ক্রিম ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এলাকার কসমেটিকসের দোকান ‘বিনিময় প্রসাধনী’র কাজী বাপ্পীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত জাতিসংঘের মিশনে যাওয়া সেনা বা পুলিশ সদস্যরা ওডোমস ক্রিম কিনে নিতেন। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের ফলে ক’দিন আগে এক ব্যক্তি নগরীর কমপক্ষে ১০টি কসমেটিকসের দোকান থেকে ৩০০ পিসের মতো ওডোমস ক্রিম কিনে নেয়। এরপর থেকে বাজারে ওডোমসের তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। ঢাকা থেকেও আমাদের সরবরাহ করতে পারছে না।

একই রকম তথ্য জানান ‘বিস্ময় বিচিত্রা’র মো. মকবুল হোসেন ও ‘সাজনী প্রসাধনী’র শামসুল ইসলাম। তারা জানান, এ ক্রিমের সরবরাহ না থাকায় প্রচুর পরিমাণে মসকিউটো র‌্যাকেট (ইলেকট্রিক ব্যাট) বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বেড়েছে গুড নাইট রিফিলেরও। ৩৪০ টাকায় ব্যাট ও ১৪৫ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে রিফিল।

এ কয়দিনে মশার কয়েলের দামও অনেকেই অতিরিক্ত রাখছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

নগরীর কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়দিন আগেও চায়না মশার কয়েল বাওমার এক প্যাকেটের দাম ছিল ৬০ টাকা। এখন এটি ৬৫ থেকে ৭০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। আগের দামে কয়েল পাওয়া যাচ্ছে খুব কম জায়গায়।

যেসব দোকানে আগের দামে কয়েল পাওয়া যাচ্ছে এরমধ্যে নগরীর সানকিপাড়া এলাকার আনন্দ কনফেকশনারি একটি। দোকানি জানালেন, তারা আগের দামেই কয়েল বিক্রি করছেন।

নগরীর গোহাইলকান্দি এলাকার গৃহিণী লিপি আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আগে মাসে দুই থেকে তিন প্যাকেট কয়েল লাগতো। এখন ডেঙ্গু আতঙ্কে দিনে-রাতে কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। ফলে এখন আগের তুলনায় বেশি কয়েল লাগছে। আর এ সুযোগে দোকানিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে আমাদের।

মশারির দামও বেড়েছে নগরীতে। নগরীর আজাদ বস্ত্রালয়, গৌরহরীসহ নামি বস্ত্রালয়গুলো ডেঙ্গুর সুযোগে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। ছোট, মাঝারি বা বড় সব আকারের মশারিতেই তারা ২ থেকে ৩ শত টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৯
এমএএএম/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ