ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৯
খুলনায় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা বাবার পাশে লামিয়া। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: জমি দখলকে কেন্দ্র করে খুলনায় এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে এ অভিযোগ করেন লবণচরা থানার জিরো পয়েন্ট এলাকার ভুক্তভোগী ওই পরিবারের সদস্যরা। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা (গেজেট নম্বর-১১৬১) মো. আব্দুল কাদের আকনের মেয়ে স্কুলছাত্রী লামিয়া।

 

তিনি বলেন, আমার বাবা অসহায় অসুস্থ দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা। তার কাছে ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের এলাকার নজরুল ইসলাম দুই কাঠা জমি দশ লাখ টাকায় বিক্রির ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। তিনি জানান, জমির মোট মূল্য দশ লাখ টাকা। এর মধ্যে তাকে অগ্রিম পাঁচ লাখ টাকা দিলে তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তির দখল বুঝিয়ে দেবেন। বাকি পাঁচ লাখ টাকা প্রতি তিন মাস অন্তর বাবা যখন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাবেন, তখন সেখান থেকে পনেরো হাজার টাকা করে পরিশোধ করবেন। এ শর্তে রাজি হলে ১৫০ টাকা দামের নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তিতে সই করে নজরুলকে পাঁচ লাখ টাকা দেন বাবা। নজরুল ইসলাম বায়নাপত্র হস্তান্তর করেন ও তফশিলের দুই কাঠা জমির দখল বুঝিয়ে দেন। তখন থেকেই ওই জমির দখলে আছি আমরা।  

লামিয়া বলেন, বায়না করা পাঁচ লাখ ছাড়া বাকি পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ হলেই নজরুল ইসলাম জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেবেন বলে চূড়ান্ত হয়। কিন্তু, এ বছরের মার্চ মাসে বাকি টাকা পরিশোধ হলেও তিনি রেজিস্ট্রি না করে বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকেন। এ অবস্থায় কোনো উপায় না পেয়ে আমার মা চলতি বছরের ২৩ জুন লবণচরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি করার পর থেকেই নজরুল ইসলামের লোকজন আমাদের ওপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার করতে থাকে। আমাদের ঘরের বিদ্যুতের মিটার বিচ্ছিন্ন করে দেন। নজরুল লোকজন নিয়ে আমাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করেন। আমার মাকে ও আমাকে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলেন। পরে, খুলনা আদালতে গিয়ে আমার মা একটি সিআর মামলা করেন। এ মামলায় নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু, সেখানেও টাকা দিয়ে সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে ফেলেন নজরুল ইসলাম। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি।  

তিনি বলেন, নজরুল ও কামরুল তাদের লোকজন দিয়ে গত ২৯ জুলাই আমাদের ঘরের রাস্তার পাশের জানালায় কাগজে ইয়াবা ট্যাবলেট মুড়িয়ে রেখে জেলা মাদকদ্রব্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা হাওলাদার মো. সিরাজুল ইসলামকে (পরিদর্শক) দিয়ে তল্লাশি করায়। তিনি জানালার কাছে গিয়ে বলেন, ‘এই পেয়েছি’। এসময় আমাকে ও মাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। পরে, আমার মাকে ধরে নিয়ে যান। মাকে নিয়ে যাওয়ার পর নজরুল আমাকে ফোন করে বলেন, জায়গা থেকে তো নামবি না, ছয় মাস জেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিলাম। এরপর তোকে বাড়ি থেকে তুলে এনে অ্যাসিড মেরে জীবনে শেষ করে দেবো।  

মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে লামিয়া বলেন, নজরুল ইসলামের এমন অত্যাচারে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তিনি আমাদের বিরুদ্ধে এমন আরও মিথ্যা মামলা দিতে পারেন। আমি ও আমার বৃদ্ধ পিতাকে মারধরসহ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ বা জীবননাশের মতো ঘটনাও ঘটাতে পারেন। সে কারণে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এসময় মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল কাদের আকনও উপস্থিত ছিলেন।

তবে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ওই নারীর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এর ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এবিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নগর শাখার কমান্ডার অধ্যাপক আলমগীর কবির বাংলানিউজকে বলেন, আব্দুল কাদের আকনের পরিবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে কখনোই জড়িত থাকতে পারে না। এটা পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৯
এমআরএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।