ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে মুন্সিগঞ্জের সব মৎস্য অফিস

সাজ্জাদ হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৯
জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে মুন্সিগঞ্জের সব মৎস্য অফিস

মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জ জেলার সব মৎস্য অফিসে ৩০টি পদের বিপরীতে ১১টি পদ খালি রয়েছে। একদিকে অনুমোদিত পদের সংখ্যা কম, অন্যদিকে পদ খালি থাকায় অফিসগুলোতে দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ জেলার মেঘনা ও পদ্মা নদীতে একটি বড় অংশে ইলিশের অভয়ারণ্য রয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বেশি কারেন্টজাল উৎপাদন করা এ জেলায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ফ্যাক্টরিগুলোতে অভিযান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা পোহাতে হয়। জনবল ও বরাদ্দ কমের কারণে অভিযান পরিচালনাও আগের থেকে কমে গেছে।

ছয়টি উপজেলার মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, লৌহজং উপজেলা মৎস্য অফিসে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও অফিস সহায়ক পদ, সিরাজদিখানে অফিস সহকারী ও ক্ষেত্র সহকারী, শ্রীনগরে একজন অফিস সহায়ক, একজন অফিস সহকারী কম্পিউটার ও একজন ক্ষেত্র সহকারী, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা মৎস্য অফিসে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ও অফিস সহায়ক, মুন্সিগঞ্জ সদরের অফিস সহকারী, গজারিয়ায় সহকারী মৎস্য অফিসারের পদ খালি রয়েছে।  

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য অফিসার ফরিদা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে জানান, অফিস সহকারীর একটি পদ খালি আছে। বাংলাদেশের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি কারেন্ট জাল উৎপাদন হয়ে থাকে। কারেন্ট জাল ফ্যাক্টরিতে অভিযান পরিচালনা করার জন্য ৬-৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়। মাসে অভিযান পরিচালনা করার জন্য ১ লাখ টাকার বেশি প্রয়োজন হয়। কিন্তু সারা বছরে এখানে বরাদ্দ আসে ৩০-৪০ হাজার টাকা। এর মধ্য থেকে আবার জাটকা মৌসুমেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। বরাদ্দ যা আসে এখানে সেটা দিয়ে ঠিকমতো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায়না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করার জন্য নিজস্ব নৌযান ব্যবস্থাও নেই।  

লৌহজং সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ইদ্রিস তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, এখানে সরকারি পাঁচটি পদের বিপরীতে তিনজন কর্মরত। এক বছর ধরে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবং পাঁচ বছর ধরে অফিস সহায়ক পদ খালি। এই জনবল দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লৌহজং উপজেলা কভারেজ দেওয়া যায়না। মা ইলিশ মৌসুমে (২২ দিনে) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হয় প্রতিদিন। কিন্তু এসব অভিযান পরিচালনা করার জন্য যে বরাদ্দ আসে তা খুবই যতসামান্য। নানা সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। মুন্সিগঞ্জ জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে লৌহজং উপজেলাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, এখানে পদ্মা নদীর একটি বড় অংশ বিদ্যামান।  

সিরাজদিখান উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা যুধিষ্ঠির রঞ্জন পাল জানান, এখানে পাঁচ পদের বিপরীতে দু’জনের পদ খালি রয়েছে। অফিস সহায়কের পদ ৩ বছর ও ক্ষেত্র সহকারীর পদ ২ বছর যাবৎ খালি আছে। এখানে মা ইলিশ ও জটিকা মৌসুমে যেই বরাদ্দ আসে তা দিয়ে কাজ পরিচালনা করা যায়।  

শ্রীনগর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জাকির হোসেন মৃধা বাংলানিউজকে জানান, পাঁচজন পদের বিপরীতে অফিস সহায়ক, অফিস সহকারী কম্পিউটার ও ক্ষেত্র সহকারীর পদ খালি আছে।  

টংগিবাড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা সাহা জানান, পাঁচজন পদের বিপরীতে এখন দু’টি পদ খালি। সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ও অফিস সহায়কের পদ খালি আছে ৩ মাস ধরে। যা বরাদ্দ আসে তা খুব কম। এ অঞ্চলটি ইলিশ জোন হিসেবে চিহ্নিত করেনি। অনুমোদিত পদ কম এর মধ্যেও পদ খালি।

গজারিয়া উপজেলা মৎস্য অফিসার আসলাম হোসেন শেখ জানান, এখন সহকারী মৎস্য অফিসারের পদটি খালি রয়েছে। ৪ বছর আগে সৃষ্ট এ পদটিও ৬ মাস হলো এ শূন্য রয়েছে। মা ইলিশ ও জাটকা মৌসুমের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা খুব অপ্রতুল। ৪-৫ টি অভিযান পরিচালনা করলে বরাদ্দের টাকা শেষ হয়ে যায়। ৯ মাস অভিযান পরিচালনা করলে এক থেকে দেড় লাখ টাকার প্রয়োজন পড়ে। সেখানে জাটকার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। মা ইলিশ মৌসুমে ২২ দিনে ৪০-৫০টি অভিযান পরিচালনা করতে হয়।  

জনবল সংকটে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে স্বীকার করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, জনবল সংকটের ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। জেলায় যা বরাদ্দ আসে তা খুব অল্প। বরাদ্দের বাড়ানোর ব্যাপারে আসন্ন ইলিশ মৌসুমে একটি প্রস্তাব পাঠানো হবে। জেলা মৎস্য অফিসেও ১১টি পদের বিপরীতে ৪টি পদ খালি রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।