ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বালিশকাণ্ডে ৩৪ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত কমিটি 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
বালিশকাণ্ডে ৩৪ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত কমিটি 

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কর্মকর্তাদের আবাসনের আসবাব কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত খতিয়ে দেখার জন্য গঠিত দুই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৪ জন কর্মকর্তার এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিটি। 

বুধবার (২৪ জুলাই) সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩৪ জন কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৩০ জন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এবং চার জন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের।

‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ড. শৌকত আকবর ও পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল আলমের নাম রয়েছে। ড. শৌকত আকবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে কর্মরত। ’

মন্ত্রী জানান, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই টাকা ফেরত নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, তাদের (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) অনেক বিল পাওনা আছে, সেখান থেকে এই টাকা কেটে রাখা হবে।

মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে চলেছি। যেখানে দুর্নীতি ও অনিয়ম মিলবে, সেখানেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিন সিটি প্রকল্পের আসবাবপত্র ক্রয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় আমরা দুইটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আলাদা কমিটি গঠন করে দেই। অতীতের অনেক তদন্ত নিয়ে নানা কথা চালু আছে, তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না, তদন্ত ভাসা ভাসা হয়, অসম্পূর্ণ থাকে। এ জন্য বলেছিলাম ঘটনায় যারা জড়িত তাদের তথ্য দিতে হবে, ক্যাটাগরিক্যালি তথ্য দিতে। অন্যায়ভাবে কাউকে যেনো অভিযুক্ত করা না হয়। তদন্ত কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে বিভিন্ন অনিয়মের জন্য ৩৪ জন কর্মকর্তাকে দায়ী করেছেন। এর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৩১ জনকে দায়ী করে। এদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত। বাকি ৩০ জনের মধ্যে তিন জন পিআরএল (অবসরোত্তর ছুটি) ভোগ করছেন এবং ২৭ জন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ১৬ জনকে বরখাস্ত ও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। আর ১০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। মামলা হওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর চার জন কর্মকর্তা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের। এরা হলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর, উপ-প্রকল্প পরিচালক হাসিনুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহবুব। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।

মন্ত্রী বলেন, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে অন্য যারা দুর্নীতি অনিয়মে জড়িত হবে, তাদের জন্য এটা একটা বার্তা হবে। দুর্নীতি-অনিয়ম কোনোভাবে বরদাশত করা হবে না। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যে টাকা অতিরিক্ত নিয়েছে, ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা, এই টাকা উদ্ধারের জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। অন্যান্য কাজে তাদের বিল পাওনা আছে। সেখান থেকে আমরা এই টাকা কেটে রাখবো। অর্থাৎ অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রের যে টাকা নেওয়া হয়েছে একটি টাকাও তারা হজম করতে পারবে না। ওইসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ যারা দুর্নীতিতে জড়িত থাকে তাদের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে তাদের ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্লাক লিস্টসহ অন্যান্য যে বিষয় আছে, সে পদক্ষেপ নেবো।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে কেউ সরাসরি সেখানে কাজ করে না। মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অধিদপ্তরে কর্মকর্মতারা কাজ করেন। তারা গণপূর্ত অধিদপ্তরের। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নাই, এটা দেশের স্বার্থে জাতির স্বার্থে। মিডিয়াতে তথ্য আসায় আমরা জানতে পেরেছি এবং পদক্ষেপ নিতে পেরেছি, এ জন্য মিডিয়াকে ধন্যবাদ।  
 
১৫ কর্মকর্তা অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রাক্কলন প্রস্তুত করার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এরা হলেন- পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে রিজার্ভে) মোহাম্মদ মাসুদুল আলম, পাবনা গণপূর্ত উপ-বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, পাবনা গণপূর্ত উপ বিভাগ-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল, পাবনা গণপূর্ত ই/এম উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আহম্মেদ সাজ্জাদ খান, পাবনা গণপূর্ত উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী রুবেল হোসাইন, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফজলে হক, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, পাবনা গণপূর্ত উপ-বিভাগ-১ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুজ্জমান, পাবনা গণপূর্ত উপ-বিভাগ-২ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল কবীর, পাবনা গণপূর্ত উপ-বিভাগ-২ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহীন উদ্দিন, পাবনা গণপূর্ত (ই/এম) উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) মো. আবু সাঈদ, পাবনা গণপূর্ত (ই/এম) উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) মো. শফিকুল ইসলাম এবং পাবনা গণপূর্ত উপ-বিভাগ-১ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রওশন আলী।

পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী এবং রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) (রিজার্ভ) (চ. দা) এ কে এম জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে সুষ্পষ্টভাবে পিপিআর এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে দরপত্র আহবানের আগেই মালামাল গ্রহণের গুরুতর অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

১০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রাক্কলন পরীক্ষা নিরীক্ষা ও সুপারিশ, প্রাক্কলন যাচাই-বাছাই ও অনুমোদন এবং বিল প্রদানের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এরা হলেন পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা, রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) মো. আহসানুল হক, রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) খোরশেদা ইয়াছরিবা, পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) (অতি:দায়িত্ব) সুমন কুমার নন্দী, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নজিবর রহমান, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহনাজ আখতার, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী (স্টাফ অফিসার) তানজিলা শারমিন, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম, গণপূর্ত (ই/এম) উপ-বিভাগ পাবনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিউজ্জমান।

বাকি অবসরপ্রাপ্ত একজন এবং পিআরএল ভোগরত তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব পাঠানোর জন্য প্রধান প্রকৌশলী গণপূর্ত অধিদপ্তরে পত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এরা হলে রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (অবসরপ্রাপ্ত) মো. শফিকুর রহমান, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের সহকারী প্রকৌশলী (পিআরএল ভোগরত) মো. মোকলেছুর রহমান, রাজশাহী গণপূর্ত জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী (পিআরএল ভোগরত) মো. নূরুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (পিআরএল ভোগরত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
এসকে/এমএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।