ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ব্রিজ পার হতে দুই সাঁকো!

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
ব্রিজ পার হতে দুই সাঁকো! এক ব্রিজ পার হতে দুই সাঁকো, ইনসাটে অন্য পাড়। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: এক ব্রিজ পার হতে দুই সাঁকো! কথাটা শুনলে একটু অন্যরকমই মনে হয়। কারণ সাঁকো তৈরি ও পার হওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে বানানো হয় ব্রিজ। সে ব্রিজ পার হতেই যদি লাগে দুই সাঁকো তাহলে তো অবাক হওয়ারই কথা। এমনটাই ঘটেছে বাগেরহাট সদর উপজেলার আলোকদিয়া ভাতছালা সড়কের দফারআড়া খালের ওপর নির্মিত ব্রিজের ক্ষেত্রে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ১৮ লাখ টাকায় নির্মিত ওই ব্রিজটিতে উঠতে দুই পাড় থেকে দুইটি সাঁকো ব্যবহার করতে হয় এলাকাবাসীর। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনারও শিকার হয় তাদের।

এলাকাবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ সত্ত্বেও ১১ বছর ধরে ব্রিজটি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সদর উপজেলার দফারআড়া খালের ওপর ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এ ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের ছয়মাস যেতে না যেতেই সেটি একপাশে হেলে পড়ে। ব্রিজের দু’পাড়ের সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে যায়। সেই থেকে এলাকাবাসী ব্রিজটির দুই পাড়ে দু’টি সাঁকো দিয়ে নিজেদের যোগাযোগ রক্ষা করছে। তবে এ ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফারহা এন্টারপ্রাইজের ১০ শতাংশ জামানত ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। তবে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ায় এলাকাবাসীর কী আসে যায়, ভোগান্তি তো আর কমেনি। ব্রিজের দু’পাড়ে সাঁকো।  ছবি: বাংলানিউজ

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফারহা এন্টারপ্রাইজ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেনতেনভাবে কাজ হওয়ার কারণে এলাকাবাসী বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকেরা ভয়ভীতি দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করে বিল তুলে নেয়।

আলোকদিয়া এলাকার আব্দুল হাকিম বলেন, দফারআড়া খালের ওপর এই ব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিন বানিয়াগাতী, আলোকদিয়া, চরগ্রাম ও ভাতছালা গ্রামের শত শত লোক যাতায়াত করে। কিন্তু সেটি অকেজো থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল মামুন শেখ বলে, বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাই। বাড়ি থেকে দফারআড়া খালের ব্রিজটির কাছে এলে কান্না আসে। কারণ বাইসাইকেল কাঁধে নিয়ে অনেক কষ্টে পার হতে হয় ব্রিজটি। অনেক সময় দুর্ঘটনায়ও পড়তে হয়। শুধু আল আমিন নয় এমন অভিযোগ ওই এলাকার অনেক শিক্ষার্থীর।

ভ্যানচালক কেরামত শেখ বলেন, ব্রিজটি অকেজো হওয়ায় ভ্যান নিয়ে ওপাড়ে যেতে পারি না। এখান থেকে ভ্যান নিয়ে ওপাড়ে যেতে পারলে প্রতিদিন আরও বেশি আয় করতে পারতাম।

এলাকার ডিঙি নৌকার মাঝি এনামুল শেখ বলেন, ব্রিজটি খালের মাঝখানে হেলে থাকায় নিচ দিয়ে নৌকা নেওয়া যায় না। প্রতিবার ওই জায়গা অতিক্রমকালে ব্রিজটির দু’পাড়ে দেওয়া সাঁকো খুলে আমাদের নৌকা পার করতে হয়। এতে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছে স্থানীয়রা।  ছবি: বাংলানিউজ

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফারহা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী হিসেবে রফিকুল ইসলামের মোবাইলফোনে কল দিলে একজন নারী ফোন রিসিভ করেন। তিনি জানালেন রফিকুল ইসলাম ও ফারহা এন্টারপ্রাইজের কাউকে চিনেন না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, নিম্নমানের কাজের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই জায়গায় পুনরায় একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমরা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছি। কিন্তু খালটির প্রস্থ অনুযায়ী গার্ডার সেতু করা প্রয়োজন। যা আমাদের আওতার বহির্ভূত।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ