ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৬৫ দিনের অপেক্ষা শেষ, মধ্যরাতে সাগরে যাচ্ছেন জেলেরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
৬৫ দিনের অপেক্ষা শেষ, মধ্যরাতে সাগরে যাচ্ছেন জেলেরা

বরিশাল: বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাত থেকে। ফের সাগরে নামার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বরিশাল বিভাগের সোয়া দুই লাখ জেলে।

দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকার পরে শেষ মুহূর্তে এসে আবারও প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে জেলে পল্লীসহ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোতে। আর গবেষণার ফল হিসেবে ৬৫ দিনের এ নিষেধাজ্ঞার পর আগের থেকে বেশি মাছ আহরণ করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে মৎস্য বিভাগ।

মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে তিন লাখ ৫২ হাজার ৭২৪ জন জেলে রয়েছেন। যার মধ্যে সব থেকে বেশি জেলে রয়েছেন ভোলা জেলায়। আর সব থেকে কম ঝালকাঠি জেলায়। যদিও সরকারি এ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সাগরে বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার জেলেরা খুব কমই মাছ শিকার করতে যান।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬৫ দিন সাগরে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞার সময় এক একজন জেলেকে ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। বিভাগের বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলায় মোট চাল পেয়েছেন দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৫৪ জন জেলে। যার মধ্যে সব থেকে বেশি পেয়েছেন ভোলা জেলায় এক লাখ সাত হাজার ৭৭ জেলে। তারপর পটুয়াখালী জেলায় ৬৪ হাজার ৭৭৭ জেলে। বরগুনায় জেলায় ৩৯ হাজার ৮০০ ও পিরোজপুর জেলায় সব থেকে কম ৮ হাজার ৩২০ জন জেলে। আর এ সহায়তার হিসাব অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে সোয়া দুই লাখের বেশি জেলে সাগরে মাছ শিকারে নিয়োজিত।

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আজিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বরিশাল বিভাগ থেকে বঙ্গোপসাগের যে পরিমাণ জেলে মাছ শিকারে যান, তার মধ্যে ভোলা জেলার জেলেদের সংখ্যা বেশি। এরপর পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার অবস্থান। আর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার কিছু জেলে থাকলেও বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে তেমন একটা যায় না।  এ দুই জেলার বেশিরভাগ জেলেই নদীতে মাছ শিকার করেন।

তিনি বলেন,  মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সাগরের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলে পল্লীতে কর্মব্যস্থতা শুরু হয়ে গেছে। জেলেরা সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আর ব্যবসায়ীরা ভালো কিছুর অপেক্ষায় রয়েছেন। আগে জেলেরা অনেক মাছ পেলেও ভালো দর পেতেন না, আর এখন এক ইলিশ মানেই চার/পাঁচশ’ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে হাজার টাকাও পার হয়ে যায়। তাই জেলেরাও কিন্তু হতাশ নন।  

আজিজুল হক বলেন, গবেষণার ভিত্তিতে বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট আইন, নির্দেশনা ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ২০০৭-২০০৮ সাল থেকে এখন আমরা অনেক ভালো অবস্থানে চলে এসেছি।

এবারও ইলিশসহ সব মাছের উৎপাদন বাড়বে বলেই আশা প্রকাশ করে মৎস কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, গোটা দেশে ইলিশের যে উৎপাদন হয়, তার মধ্যে বরিশাল বিভাগেই শতকরা ৬৬ ভাগ উৎপাদন হয়। বিভিন্ন গবেষণার ফলে নদী-সাগরে আজ মাছের উৎপাদন বাড়ছে। শুধু নদী-সাগরে নয়, চাষের মাছের উৎপাদনও বাড়ছে দিনে দিনে।  

এদিকে, সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা কিছুটা অখুশি রয়েছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার শেষ সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই জেলেদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্যতা দেখা দিচ্ছে। যদি জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে, তবে মৌসুমের অর্ধেক সময়টা অলসভাবে পার হওয়ার কষ্টটা আর মনে দানা বাধবে না এমন আশাই জেলেদের।  

ফিশিং বোটের মাঝি রহমান জানান, মাছ শিকার ছাড়া আর কোনো পেশার অভিজ্ঞতা না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টেই ছিলেন। তারপরও ভালো মাছ পেলে এ কষ্ট থাকবে না মনে।

মহিপুর মৎস্য বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফজলু গাজী বলেন, মৌসুমের শুরুতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার ফলে দক্ষিণের বড় মাছের মোকাম আলীপুর-মহিপুরের আড়তগুলো হয়ে পড়েছিল নিষ্প্রাণ। অলস সময় পার করেছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। তবে এখন সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতিতে কর্ম চঞ্চল হয়ে উঠছে। আশা করছি, সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে।  

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা বলেন, আলিপুর-মহিপুর থেকেই প্রায় সাড়ে ৩০০ ফিশিং বোট সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। আর নিষেধাজ্ঞার ফলে জেলেদের জালে এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯ 
এমএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।