ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘চার কারণে এসিড সন্ত্রাস কমেছে বাংলাদেশে’

নিজস্ব প্রতিবেদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯
‘চার কারণে এসিড সন্ত্রাস কমেছে বাংলাদেশে’ ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বাংলাদেশে চার কারণে এসিড সন্ত্রাস কমেছে বলে জানিয়েছে এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)। রোববার (২১ জুলাই) রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে এ নিয়ে আয়োজিত অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় নিজেদের পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে সংস্থাটি। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ইতিবাচক চর্চা এবং সম্ভাব্য কৌশলসমূহ’।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও শিশু অধিকারবিষয়ক সংসদীয় ককাস সদস্য আরোমা দত্ত। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আইনুল কবীর ও ঢাকায় নিযুক্ত ইউএনডিপির মানবাধিকার কর্মসূচির চিফ টেকনিক্যাল এডভাইজার শর্মিলা রসুল।

এএসএফের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মাসুদ আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় যৌথভাবে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এএসএফের নির্বাহী পরিচালক সেলিনা আহমেদ ও প্রধান গবেষক ফজিলা বানু লিলি। গত অক্টোবর ২০১৮ থেকে জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত ইউএনডিপির মানবাধিকার কর্মসূচির সহায়তায় এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এসিড আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রধানত চারটি বিষয় কাজ করেছে। গবেষণা পরিচালনাকালে সাক্ষাৎকারী প্রদানকারীদের দেওয়া তথ্য ও মতামতের ভিত্তিতে এটা প্রতীয়মান হয়। প্রথমত, তাদের ৬২ শতাংশ বলেছেন, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০২ এবং এসিড অপরাধ প্রতিরোধ আইন ২০০২ এসিড সন্ত্রাস কমিয়ে আনতে মূল ভূমিকা পালন করেছে। দ্বিতীয়ত, ৭০ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ সাক্ষাৎকার প্রদানকারী মতে, গণমাধ্যমের ভূমিকা ও বিভিন্ন প্রচারাভিযান এসিড সন্ত্রাস কমিয়েছে। তৃতীয়ত, ৩৭ শতাংশের মতে, নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এ ক্ষেত্রে। চতুর্থত, এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রচারাভিযান ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম এসিড সন্ত্রাস কমাতে অনন্য ভূমিকা রেখেছে।

সংরক্ষিত নারী আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়ে যারা জীবনযুদ্ধে লড়েন, তারা কী বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকেন তা সমাজকে অনুধাবন করতে হবে। এই ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে যোদ্ধা আখ্যায়িত করে তাদের সহায়তায় এবং এসিড সন্ত্রাস নির্মূলে সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম করার তাগিদ দেন তিনি।

অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায়, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ প্রধান অতিথির বক্তব্য আরোমা দত্ত বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনেক দৃঢ় এবং প্রত্যয়ী। গবেষণার ফলাফল বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করার জন্য এএসএফের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অতিরিক্ত সচিব আইনুল কবীর বলেন, সরকার নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ সহিংসতা নির্মূলে কিশোর-কিশোরীদের নৈতিক শিক্ষায় গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

ইউএনডিপি প্রতিনিধি শর্মিলা রসুল বলেন, সাসটেইঅ্যাবল উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন করতে হলে নারী-পুরুষ সমতা অর্জন করতে হবে। সহিংসতা কমিয়ে আনতে হবে। আর এটা করার জন্য এসডিজি স্বাক্ষরকারী হিসেবে বাংলাদেশের একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এএসএফের নির্বাহী পরিচালক সেলিনা আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের ভূমিকার ধারাবাহিকতা, পরিবারে সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের দ্রুত সাড়া, পুরুষদের কার্যকর অংশগ্রহণ, ক্ষমতাবানদের চাপ মোকাবেলার মতো আইন প্রণয়ন এসিড সহিংসতা নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এসিড সন্ত্রাসের শিকার ব্যক্তিদের মর্যাদার সঙ্গে সমাজে পুনর্বাসনে জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)। জন্মলগ্ন থেকেই এসিড সহিংসতা প্রতিরোধ, এসিড এসিড সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা প্রদান, আইনি সহায়তা ও পুনর্বাসন এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা এবং এসিড সন্ত্রাস নির্মূলের লক্ষ্যে সারা দেশে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে একযোগে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২২,  ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।