ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছেলেধরার গুজবে গণপিটুনি, পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশনা

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
ছেলেধরার গুজবে গণপিটুনি, পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশনা প্রতীকী ছবি

ঢাকা: ‘পদ্মাসেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ গুজব কেন্দ্র করে দেশজুড়ে গণপিটুনিতে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। গুজব প্রতিরোধে পুলিশের সব ইউনিট প্রধান ও জেলা পুলিশ সুপারদের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেধরা সংক্রান্ত পোস্ট বা মন্তব্য ছাড়ানোদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, গুজব ঠেকাতে প্রতিটি এলাকায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিং করার কথাও বলা হয়েছে।


 
সোমবার (২২ জুলাই) পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-অপারেশন্স) সাঈদ তারিকুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে দেশব্যাপী পুলিশের সব ইউনিটকে।
 
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে হত্যার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। গণপিটুনি দিয়ে হত্যা ও গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা ফৌজদারি অপরাধ। গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা বন্ধে সংশ্লিষ্ট ইউনিট/জেলা পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
 
পুলিশ সদর দফতরের এ বার্তায় চারটি উপায়ে ছেলেধরা গুজব ও গণপিটুনি প্রতিরোধে পুলিশের ইউনিটগুলোকে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নির্দেশনায় বলা হয়েছে- দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, স্কুলে অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়, ছুটির পর অভিবাবকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্কুল ত্যাগের বিষয়টি শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মাধ্যমে নিশ্চিত করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সিসিটিভি স্থাপন করা।
 
জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতিটি এলাকায় ছেলেধরার গুজবে কান না দিতে এবং পুলিশকে তাৎক্ষণিক তথ্য জানানোর জন্য মাইকিং করা, লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিং করতে বলা হয়েছে। এছাড়া এলাকার জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, জনসাধারণদের নিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো, আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পুলিশের হাতে ‍তুলে দেওয়ার বিষয়ে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা, প্রতিদিন মসজিদে এ সংক্রান্ত বক্তব্য দেওয়ার ব্যবস্থা এবং মেট্রোপলিটন ও জেলা শহরের বস্তিতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনিটরিংয়ের বিষয়ে- ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেধরা সংক্রান্ত বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট, মন্তব্য বা গুজব ছড়ানোদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
 
এছাড়া গুজবে কান দিয়ে ছেলেধরা বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 
ইউনিট প্রধান নিজ নিজ এলাকায় গৃহীত আইনানুগ ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
 
চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, ‘পদ্মাসেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে' বলে একটি গুজব ছড়ানো কেন্দ্র করে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মর্মান্তিকভাবে কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। গুজব বন্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনায় জুড়ে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সবশেষ রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেনু নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার (২০ জুলাই) সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করানোর তথ্য জানতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান মা তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এসময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে প্রধান শিক্ষকের রুম থেকে টেনে বের করে গনপিটুনিতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় এদিন রাতেই বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাগিনা নাসির উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।