ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফার্স্ট ক্লাস স্টেশনে থার্ড ক্লাস সিট!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
ফার্স্ট ক্লাস স্টেশনে থার্ড ক্লাস সিট! সিলেট রেলস্টেশনে ভাঙা চেয়ার। ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: উত্তরপূর্বাঞ্চলের সীমান্ত রেলস্টেশন সিলেট। ১৮৯১ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে বাংলার পূর্ব দিকে রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় চা রোপণকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। ধীরে ধীরে এই অঞ্চল রেল যোগাযোগ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১২-১৯১৫ সালে কুলাউড়া-সিলেট অংশ খোলা হলে সিলেট রেলস্টেশন চালু হয়। ২০০৪ সালে জোট সরকারের সময় আধুনিক অবকাঠামোয় গড়ে ওঠা রেলস্টেশনের উদ্বোধন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান।

উদ্বোধনের পরই স্টেশনের ছাদে ফাটল ধরায় কাজের অনিয়ম নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। আর দেড় দশক পার হলেও সিলেট রেলস্টেশনে অবকাঠামোগত উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ফলে সিলেট রেলস্টেশনের জীর্ণদশা কাটছে না দেড় দশকেও। স্টেশন অভ্যন্তরে যাত্রীদের অপেক্ষমান চেয়ারের দেখলেই সিলেট রেলস্টেশনের দৈন্যদশার চিত্র ফুটে ওঠে।

সরেজমিন স্টেশনে ঘুরে দেখা যায়, স্টেশন অভ্যন্তরে যাত্রীদের অপেক্ষমান ৭৭টি স্টিল, প্লাস্টিক ও সোফার বসার চেয়ার অধিকাংশ অকেজো পড়ে আছে। কয়েকটি চেয়ার আংশিক ভালো থাকলেও হাতলবিহীন, হেলে পড়ায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে সেসব চেয়ারেই বসছেন যাত্রীরা।

যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে বসার চেয়ারের এমন দৈন্যদশা থাকলেও মেরামত কিংবা পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেই রেল কর্তৃপক্ষের।

নগরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেসের যাত্রী ইশরাত জাহান বাংলানিউজকে বলেন, চেয়ারগুলো দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, আমরা যাত্রীরা কতটা অবহেলিত। যাত্রীদের বসার অনুপযোগী চেয়ারগুলোতে বসা তো দূরে থাক, একটি ফার্স্ট ক্লাস স্টেশনে এমন চেয়ার দেখলেও লজ্জা লাগে।

সিলেটের ওয়েস্টার ফুড কোম্পানির কর্মকর্তা কবির আহমদ বলেন, এ আর নতুন কি দেখছেন? সিলেট রুটে যেখানে রেল যোগাযোগের দৈন্যদশা, সেখানে চেয়ার নষ্ট থাকাটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, যেখানে দেশের অন্য রুটগুলোতে ভালো মানের ট্রেন সার্ভিস চালু হচ্ছে। সেখানে সিলেটে রুটের ট্রেনগুলো জরাজীর্ণ কোচ দিয়ে চলছে। আন্তঃনগর তাপানুকূল কোচেও লাইট নষ্ট, নয়তো সুইচ নষ্ট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট-ঢাকা রুটে চারটি আন্তঃনগরকালনী, জয়ন্তিকা, পারাবত, ও উপবন এক্সপ্রেস চারটি ট্রেন চলাচল করে। আর পাহাড়িকা, উদয়ন এক্সপ্রেস চলে চট্টগ্রাম রুটে। এসব ট্রেনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, আমলা, সরকারি দফতরের কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ চলাচল করেন। আসা-যাওয়ার পথে স্টেশনে অবস্থান করতে হয় তাদের। কিন্তু এসব স্টেশনের নষ্ট ওয়েটিং চেয়ারের দিকে নজর দেওয়ার যেনো সুযোগ নেই কারো।

স্টেশনের প্রারম্ভিক লগ্নে স্থাপন করা এসব চেয়ার এখনো সোফা চেয়ার ২৩টাই বসানোর অনুপযোগী। ২৪টা স্টিলের চেয়ারের ১১টি অকেজো। অবশিষ্টগুলোতে কোনোভাবে বসে সময় পার করেন প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষরত যাত্রীরা। এছাড়া প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সময় হাতের বাম পাশের ১২টি প্লাস্টিকের চেয়ারের মধ্যে ৯টিই ভাঙা, একইভাবে ডান পাশের চেয়ারগুলো কোনোভাবে বসার উপযোগী রয়েছে।

সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক আফছার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিনের পুরানো চেয়ারগুলো ভেঙে গেছে। ভাঙা চেয়ারগুলোর মেরামতের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

এতদিন ধরে ভাঙা চেয়ারগুলোর কেনো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।