ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

জমজমাট দক্ষিণের নৌকার বাজার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
জমজমাট দক্ষিণের নৌকার বাজার নৌকার বাজার। ছবি: বাংলানিউজ

পিরোজপুরের নেছাবারাদ থেকে ফিরে: ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল। যা এখনো বরিশালের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। বিশেষ করে দক্ষিণের এই জনপদের নদী আর খালের প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য যে কারোরই মনকে বিমোহিত করবে। আর এই নদী-খাল, বিলকে ঘিরেই এ অঞ্চলের মানুষের সংগ্রামী জীবনযাপনের সঙ্গে এগিয়ে চলছে বছরের পর বছর ধরে।

নদী ও খাল বেষ্টিত বরিশাল বিভাগের প্রায় সর্বোত্রই কাঠের তৈরি নৌকার কদর রয়েছে। সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেও গ্রামীণ জনপদে এখনো নৌকার কদরই বেশি।

এখনও এমন বাড়ি রয়েছে যেখানে গাড়ি না থাকলেও কমপক্ষে একটি নৌকা রয়েছে। আর এ নৌকাই সহায়ক হিসেবে কাজ করছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন-জীবিকায়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে নৌকার প্রয়োজনটা দেখা দেয় গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ মানুষের। এই মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের পেয়ারাহাট, সবজির হাট, কৃষি, মাছ ধরা এমন কি অনেক গ্রামে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতেও নৌকাই একমাত্র বাহন। চারদিকে টইটুম্বুর পানিতে নৌকা ছাড়া যেন কোনো কাজ করাই দায়। নৌকার বাজার।  ছবি: বাংলানিউজআর তাই এই বর্ষা মৌসুমেই বেড়ে যায় গ্রামীণ হাট-বাজারগুলোতে নৌকার বেচা-বিক্রি। বিভাগের অনেক জায়গাতেই নৌকার ছোট-খাটো হাট বসে। তবে বরিশালের আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়া, পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার হাটগুলোতে সব থেকে বেশি নৌকার সমাগম ঘটান ব্যবসায়ীরা। যদিও এরমধ্যে পিরোজপুরের নেছারাবাদে এককালীন স্বরূপকাঠী উপজেলার কাঠের নৌকার কদর সবসময়ই একটু বেশি। কারণ গুণে ও মানে এ নৌকাগুলো একটু আলাদা হয়ে থাকে এবং অন্য স্থানের চেয়ে দামেও একটু সস্তা হয়ে থাকে।

নেছারবাদ উপজেলার সব থেকে বড় নৌকার হাটের দেখা মিলে আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর বাজারে। বর্তমান সময়ে শুক্রবার ও সোমবার দু’দিন আটঘরের হাটের রাস্তা আর খালের কিনারা ঘেঁষে নৌকার বাজার বসে। তবে শুক্রবারে সব থেকে বেশি নৌকার সমাগম ঘটে এ হাটে। আর নৌকার হাটের পাশেই মাছ ধরার চাঁই ও গড়াসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ শিকারের ফাঁদ বিক্রি হয়।

হাট ঘুরে জানা যায়, জলে আর স্থলে যেখানেই চোখ পড়বে নৌকার সারি দেখা যাবে হাটের পুরো মাইলখানেক এলাকাজুড়ে। এ হাটে মানুষের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই নৌকার সমাগম ঘটানো হয়। বিশেষ করে বর্ষায় কোষা ও ডিঙি নৌকার চাহিদা বেশি থাকায় আটঘরের বর্তমান সময়ের হাটগুলোতে এসব নৌকারই কদর বেশি থাকে।

নৌকার বেপারিরা বলছেন, ঝালকাঠি সদর, বরিশালের বানারীপাড়া ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে নৌকা বানানোর কাজ চলে। সারাবছর ধরে নৌকার বানানোর কাজ চললেও বর্ষার সময়টা কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত মেলে না। আর নৌকা বানানো হলে পাইকার ও বেপারিরা বাড়িতে বাড়িতে সেগুলো কিনে থাকেন। পরে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলারে বোঝাই করে নৌকাগুলো হাটের উদ্দেশে নিয়ে আসা হয়।

ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আকার-আকৃতি ও প্রকারভেদে কাঠের গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে এসব নৌকা আড়াই থেকে ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে কোনো নৌকার সঙ্গেই বৈঠা ফ্রি থাকার বিষয় নেই। প্রতিটি নৌকার জন্য আলাদা বৈঠা কিনতে পাওয়া যায় এ হাটেই। যার দরও প্রকারভেদে ৩ থেকে হাজার টাকা অব্দি রয়েছে। নৌকার বাজার।  ছবি: বাংলানিউজস্থানীয় বাসিন্দা পরিমল চন্দ্র বলেন, আগে এ অঞ্চলে বেশিরভাগ নৌকা তৈরি হতো সুন্দরী কাঠে, কিন্তু কাঠের দুষ্প্রাপ্যতা ও দর বাড়ায় এখন নৌকা তৈরিতে বেশিরভাগ কারিগর মেহগণি কাঠ ব্যবহার করেন। যদিও এর ব্যতিক্রমও রয়েছে, যেমন গাব, চাম্বল, বাদাম, রেইন্ট্রি, কড়াই গাছ দিয়েও নৌকা তৈরি করেন অনেকে। তবে কাঠের ভিন্নতা যাই থাক, নৌকার হাটটি শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে এখনও আটঘর বাজার মাতিয়ে চলছে। আর আষাঢ়ে শুরু হওয়া এ হাট জমজমাট থাকবে আরও দু’মাস ধরে। যেখান শুধু আশপাশের নয় দূর-দুরান্ত থেকেও মানুষ আসে নৌকা কিনতে।

নৌকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিনে দিনে এ হাটের অবস্থান বিস্তৃতি লাভ করছে, তার ওপর ভাসমান হাট হওয়ায় আটঘরের পর্যটকদের উপস্থিতিও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সপ্তাহে দু’দিন শুক্রবার ও সোমবার ভাসমান নৌকার হাট বসে আটঘরে। আর প্রতি হাটে কয়েক লাখ টাকার নৌকা বিক্রি হয়। তবে আটঘর কুড়িয়ানার হাট ভোর থেকে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।