ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বারান্দায় শিশুদের পাঠদান

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বারান্দায় শিশুদের পাঠদান বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বারান্দায় ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: ভবন সংকটের কারণে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে যে শিক্ষার্থীরা রয়েছে, তাদেরও বিদ্যালয়ের পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বারান্দায় নয়তো বিদ্যালয়ের পাশের মসজিদের বারান্দায় বসে পাঠগ্রহণ করতে হয়। তবে এসব জায়গাতেও ঠাঁই মিলছে না বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। তাই বিদ্যালয়ের কাছেই একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চালানো হচ্ছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম।

এ চিত্র বরিশাল নগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪৪ নম্বর পশ্চিম রুপাতলী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। মাত্র পাঁচজন শিক্ষক নিয়েই চলছে এ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ সময়ই কাটাতে হচ্ছে ভবন ধসের ঝুঁকি নিয়ে আর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছোটাছুটি করে।

বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আ. রব হাওলাদার বাংলানিউজকে জানান, বিগত ১০ বছর ধরে এ বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ পুরোনো ভবনের স্থলে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেতে লেখালেখি আর ছোটাছুটি করে যাচ্ছেন তিনিসহ বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা। কিন্তু এখনও নতুন ভবন তৈরির জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ কয়েক বছর আগে পাওয়া এককালীন সরকারি বরাদ্দের টাকা দিয়ে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হলেও দুই সপ্তাহ আগে ঝড়ের সময় গাছ পড়ে সেটিও ধ্বংস হয়ে যায়।  

বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন।  ছবি: বাংলানিউজতাই এখন কোনোরকমে বিদ্যালয়ের পাশের মসজিদের বারান্দাতেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। আর নামাজের সময় বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বারান্দাতেই পাঠদান করাতে হচ্ছে।

প্রাক্তন এই শিক্ষক বলেন, এ বিদ্যালয়ের আশপাশের তিন কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ফলে এ বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। তবে ভবন সংকটের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। আগে গড়ে এখানে তিনশ’ শিক্ষার্থী থাকলেও এখন সে সংখ্যা আড়াইশতে নেমে গেছে। এখানে বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষই নিম্ন আয়ের।

১৯৬৪ সালে স্থাপিত হওয়া সত্ত্বেও এ বিদ্যালয়টি ভবন পায় ১৯৯৪ সালে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে এ বিদ্যালয়ের জন্য তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়। তবে এরপরও পাওয়া যায়নি কোনো নতুন ভবন।  

বিদ্যালয়ের পাশের মসজিদের বারান্দায় ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা।  ছবি: বাংলানিউজসরকার পক্ষ থেকে এ বিদ্যালয়ের জন্য এককালীন বাৎসরিক ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। যা ব্যবহার করে বাঁশ ও টিন দিয়ে দুইটি নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়। তবে কিছুদিন পূর্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সেটিও ভেঙে যায়।  

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫৪। তাদের জন্য তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মাত্র দুইটি শ্রেণিকক্ষের। আর বাকি দু’টির মধ্যে একটিতে শিক্ষকরা, অন্যটিতে বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল রাখা হয়।  

অন্যদিকে এই বিদ্যালয়ে ভবন সংকটের পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষক সংকট। বিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে মাত্র পাঁচজন শিক্ষক। এছাড়া গত মাসে এ বিদ্যালয়ের জন্য সরকার থেকে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর পাওয়া গেলেও, এটি ব্যবহারের জন্য কোনো শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। ফলে অকেজোই পড়ে রয়েছে এটি।

এছাড়া বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো নির্ধারিত শিক্ষক কিংবা শ্রেণিকক্ষ। কোনোমতে বিদ্যালয়ের পাশে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চালানো হচ্ছে শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান।  

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহামুদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৮ সালে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩২৮। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫৪। ভবন সংকটের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থী কমছে। যা বিদ্যালয়ের জন্য হুমকিস্বরূপ।  

বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা।  ছবি: বাংলানিউজ‘বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে সাবেক প্রধান শিক্ষকসহ আমরা বহুবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কর্মকর্তারা এসে বিদ্যালয়ের এ অবস্থা দেখেও গেছেন। এ নিয়ে তারাও লেখালেখি করেছেন। তবে এখনও ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ’

প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়ের ভবন সংকটের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। ভবন নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে। এছাড়া অনতিবিলম্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটও দূর করা প্রয়োজন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এ বিদ্যালয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থাকাকালীন এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ বৃত্তি পেয়েছিল। এছাড়া এই বিদ্যালয়ের ভবনটি ভোট কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই স্কুলের আলাদা সুনাম রয়েছে। কখনও কোনো পরীক্ষার্থী কোনো পরীক্ষায় ফেল করে নাই।  

‘তাই এই বিদ্যালয়ে একটি ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হোক- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এমন দাবিই জানাই। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
এমএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।