ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেনাপোল এক্সপ্রেস-এ স্বপ্নের যাত্রা!

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
বেনাপোল এক্সপ্রেস-এ স্বপ্নের যাত্রা! স্বপ্নের বেনাপোল এক্সপ্রেস

বেনাপোল (যশোর): ৭০ বছরের কোটায় জহুরুল হকের বয়স। বয়সের ভারে আক্রান্ত হয়েছেন নানান অসুখ-বিসুখে। সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য স্ত্রী, ছেলে ও নাতিকে নিয়ে বাসযোগে বেনাপোল থেকে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। আসার পথে আরিচা-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে তীব্র গরমের মধ্যে যানজটে টানা ৫ ঘন্টা আটকে থেকে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। 

তবে সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় বসে শুনেছেন বাড়ির সামনে দিয়েই ট্রেন চলছে। খবরটা জহুরুল হকের কাছে যেন ঈদের আনন্দ! তখনই ছেলের কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ট্রেনেই বাড়ি ফিরবেন।

ঠিক সেই কথা মতো একটি কেবিন ভাড়া করেছেন ছেলে নান্নু।

রোববার (২১ জুলাই) রাত পৌনে ১টায় বেনাপোল এক্সপ্রেসের এসি কেবিনে শুয়ে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন বেনাপোল পোর্ট থানার লেবুতলা গ্রামের জহুরুল হক।  

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে সরাসরি এসি ট্রেনের কেবিনে শুয়ে বাড়ি যাচ্ছি সত্যিই এটা অকল্পনীয়। এ যেন স্বপ্নের যাত্রা। এই রুটে ট্রেন চালু করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। ’

সঙ্গে থাকা ছেলে নান্নু হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘রোগী কিংবা বৃদ্ধ বয়সের লোক নিয়ে সড়কপথে চলাচল খুবই  কষ্টের। তবে ট্রেন অনেক আরামদায়ক। ’

ট্রেনের ‘ছ’ বগির শোভন চেয়ারের যাত্রী ঢাকার যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা ওবায়দুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা চার ব্যবসায়ী বন্ধু কলকতা যাওয়ার উদ্দেশে বেনাপোল যাচ্ছি। সকালে ট্রেন থেকে নেমেই বর্ডার পার হবো। এই ট্রেনে বায়োট্রয়লেট, মোবাইল চার্জের ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধিদের যাতায়াত উপযোগী সিট থাকায় যাত্রীরা আরামদায়ক ভ্রমণ করতে পারছেন। ’

ট্রেনের এসি চেয়ারের যাত্রী কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ব্যবসার প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে ঢাকায় আসি। ফেরিঘাটে জ্যামের খবর জানতে পারলে বিমানে আসি। ’

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অন্যরকম সন্তুষ্টি নিয়ে যাত্রীরা চেয়ারে বসেছেন। ট্রেনের ভিতরে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমে হালকা সাউন্ডে বাঁজছে পুরনো দিনের বাংলা গান। অনেক যাত্রী ট্রেনের সিটের পাশে থাকা চার্জিং পয়েন্টে চার্জার লাগিয়ে মোবাইল সার্জ করাচ্ছেন। রয়েছে উন্নত বায়োট্রয়লেট। ঘুরছে ফ্যান। সব কিছুই আধুনিক। একইসঙ্গে কেবিন ঘুরে দেখা গেলো, প্রতিটি কেবিনেই পরিস্কার কম্বল-তোষক, বিছানার ছাদর সরবরাহ করা হয়েছে। এমন সেবায় খুশি প্রতিটি যাত্রী। সরকারের প্রশংসায় যেন সকলেই পঞ্চমুখ ! 

এই ট্রেনের যাত্রী কেশবপুরের ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই ট্রেন সার্ভিস চালুর মধ্য থেকেও জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্রেশপ্রেম, দেশের উন্নয়নমূলক ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা যশোরাঞ্চলের মানুষ অনেক উন্নয়ন বঞ্চিত ছিলাম। এখন পাল্টে যাচ্ছে সব কিছু।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়া থেকে সদ্য আমদানী করা ১২টি কম্পার্টমেন্ট সমৃদ্ধ বেনাপোল এক্সপ্রেসে ৮৯৬টি আসন রয়েছে। ট্রেনটি প্রতিদিন দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে এসে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ঢাকায় পৌঁছায়। আর রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে সকাল ৮টা নাগাদ বেনাপোলে গিয়ে পৌঁছায়। যাত্রাপথে ঈশ্বরদী, যশোর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেনটি যাত্রাবিরতি দিচ্ছে।

ট্রেনের টিকিট শোভন চেয়ার শ্রেণির জন্য ৫৩৪, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসনের জন্য ১০২৫ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনের জন্য ১২২৮ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, গত ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনের পরে ১৫৫ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করা বেনাপোল এক্সপ্রেস। তবে এই ট্রেনের কেবিন ও এসি চেয়ারের টিকিট যাত্রীদের কাছে যেন সোনার হরিণের মতো! তবে উদ্বোধনের পর থেকে গত চার দিনে প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক শোভন চেয়ারের টিকিট অবিক্রিত থাকছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘বেনাপোল এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রিতে আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। সদ্য উদ্বোধন হওয়ায় সংবাদটি সাধারণ মানুষ পর্যায়ে হয়তো পৌঁছাতে বিলম্ব হয়েছে, এজন্য কিছু শোভন চেয়ারের টিকিট অবিক্রিত থাকছে। তবে, আমরা আশাবাদী দ্রুতই এ সমস্যা কেটে যাবে। সবমিলিয়ে বলা চলে, ট্রেনটি নিয়ে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী এবং কমলাপুর স্টেশনের প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীরা সুশৃঙ্খলভাবে টিকিট কিনতে পারছেন। এ ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ নজরদারি রেখেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
ইউজি/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।