রেল নিয়ে এ মন্তব্য রোববার (২১ জুলাই) রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ‘গ’ নম্বর কোচের যাত্রী এম রহমানের।
তিনি বলেন, খুলনা স্টেশন থেকে একটা টিকিট পেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়।
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে পাশের সিটে থাকা আব্দুল্লাহ নামে এক যাত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে রেলকে। কিন্তু, প্রতি বছরই লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে। যাত্রী পরিবহনে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ভর্তুকি দেয়। লোকসান পুষিয়ে নেয় পণ্য পরিবহনে। কিন্তু, বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনে নজর নেই।
আব্দুস সবুর নামে এক যাত্রী বলেন, রেলের এত বড় লোকসানের কারণ হলো দুর্নীতি, অদক্ষতা, অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ ও জবাবদিহিতার অভাব।
যাত্রীরা বলছেন, বিপুল সম্ভাবনা আর বিনোয়োগ সত্বেও লোকসান পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ রেলওয়ের। আর এর জন্য রেলের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতিই দায়ী। এসব রোধ করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে এলে রেলকে লাভজনক খাতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশ্বাস তাদের।
ট্রেনের যাত্রীরা জানান, মূলত সড়ক পথে দুঃসহ যানজট ও দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনে যাতায়াত করছেন অনেকে। স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে পৌঁছানোর কারণে রেলভ্রমণ অনেকের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তারা জানান, বেহাল সড়কের কারণে পথে নরক-যন্ত্রণা পোহাতে হয়। সড়ক পথে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটের ফেরি চলাচলে প্রায়ই বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এতে দীর্ঘ যানজটে ঢাকা পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগে। কিন্তু, ট্রেনে সে সমস্যা নেই। যে কারণে সচেতন যাত্রীরা খুলনা থেকে ঢাকায় গেলে রেলপথকেই বেছে নিচ্ছেন।
সাধারণ যাত্রীদের দাবি, খুলনা-ঢাকা রুটে বিরতিহীন ট্রেন চালু করা হোক।
রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার ওহিদ খান বাংলানিউজকে বলেন, শুধু যাত্রী বাড়লেই রেলের লোকসান কমবে না। রেলকে লাভজনক করতে হলে মালামাল পরিবহন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, সরকারের এমন কিছু নীতি-সুবিধা ঘোষণা করতে হবে, যাতে রেলে মালামাল পরিবহনে সবাই উৎসাহী হয়।
রেলওয়ের এক গার্ড বলেন, প্রতিদিন খুলনা থেকে ঢাকাগামী দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে (চিত্রা ও সুন্দরবন)। এর মধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ১৩টি বগিতে ৮৩০টি সিট আর চিত্রার ১৩টি বগিতে ৮৪০টি সিট রয়েছে। রেলপথে চলাচলে গতিশীলতা আনা, আধুনিকত্ব তৈরি, আরামদায়ক যাত্রীসেবা দেওয়ায় এর টিকিট বিক্রি বেড়েছে।
খুলনা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে মোবাইল ফোনে বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে খুলনা রেল স্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটে ৯২ হাজার ৯৭৯টি, ফেব্রুয়ারিতে ৮৯ হাজার ১৮৮টি, মার্চে ৯৭ হাজার ৪১১টি এপ্রিলে ৮৪ হাজার ৭০টি, মে মাসে ৮৩ হাজার ৭৮টি, জুনে ৮৬ হাজার ৫৯৪টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন খুলনা স্টেশন থেকে ১১টি ট্রেন বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যায়, আসেও ১১টি। রেলের সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকসানও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
ঈদ ছাড়াও অন্য সময় টিকিটের সঙ্কট থাকে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেলের ৫০ ভাগ টিকিট অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫০ ভাগ বিভিন্ন স্টেশনে ভাগ করে দেওয়া। এ কারণে খুলনা রেল স্টেশন এসে অনেক সময় টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু, অনলাইনে একটু চেষ্টা করলেই টিকিট পাওয়া যায় বলে দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০১ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
এমআরএম/একে