ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ছেলেকে বাঁচানোর আকুতি মন্টুর

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৯
ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ছেলেকে বাঁচানোর আকুতি মন্টুর

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মেয়ের জামাইকে হারিয়েছেন মো. হাসান মামুন মন্টু। একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার সাভারের এনাম মেডিক্যালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে একমাত্র ছেলে সাইফুল ইসলাম নীরব (১৪) । ছেলেকে বাঁচাতে দিশেহারা হতদরিদ্র মন্টু দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।  

সোমবার (১৫ জুলাই) উল্লাপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় বর-কনেসহ নিহত ১১ জনের মধ্যে ছিল তার একমাত্র মেয়ের জামাই খোকন শেখ (৩৫)। ছেলে নীরব আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

দুর্ঘটনায় নীরবের মস্তিস্কে জমাট বাধা রক্ত অপসারণ ও শ্বাসনালীসহ তিনটি অপারেশন হয়েছে। বর্তমানে সে সাভারের এনাম মেডিক্যালের আইসিইউতে চিকিৎসকদের নিবীড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে।  

ঢাকার ব্যয়বহুল এনাম মেডিক্যালে নিরবের চিকিৎসায় যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন ডিম বিক্রেতা হতদরিদ্র মন্টুর পক্ষে তা যোগাড় করা কখনোই সম্ভব না। একদিকে মেয়ে জামাই হারানোর শোক অন্যদিকে টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কা।  

দুশ্চিন্তা আর শোকে বিহ্বল স্ত্রী শামসুন্নাহার খাতুন ও সদ্য বিধবা হওয়া মেয়ে মুক্তা খাতুনকে বাড়িতে রেখে ছেলের চিকিৎসার খরচ যোগাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মন্টু। জনপ্রতিনিধি কিংবা বিত্তশালী ব্যক্তির সহানুভুতি কামনা করছেন তিনি।  

শনিবার (২০ জুলাই) সকালে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের ডিম বিক্রেতা হাসান মামুন মন্টু জানান, সাইকেলে করে ডিম বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪শ’ টাকা আয় তার। সামান্য আয় দিয়েই সংসার চালান। চার বছর আগে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের ঘরে একটি দেড় বছর বয়সী নাতনিও রয়েছে। একমাত্র ছেলে নিরব সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্র।  

অভাব থাকলেও অশান্তি ছিল না তার সংসারে। পাশের বাড়ির বন্ধু আলতাফের ছেলের বিয়েতে মেয়ে জামাই খোকন আর ছেলে নীরব বরযাত্রী হিসেবে যায়। বিয়ের গাড়ি আসার পথেই বেতকান্দি রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হয় ১১ জন। এ দুর্ঘটনায় আলতাফের পাশাপাশি ঝড় নেমে আসে তার সংসারেও। একমাত্র মেয়ের জামাই খোকন নিহত হয়। গুরুতর আহত হয় একমাত্র ছেলে নীরব।

মন্টু বলেন, দুর্ঘটনায় অল্প বয়সে আমার মেয়ে বিধবা হলো, নাতনি এতিম হলো। এখন একমাত্র সম্বল আমার ছেলে নিরব। তাকে ফিরে পেতে চাই।  

সাভারের এনাম মেডিক্যালে অবস্থানরত মন্টুর শ্বশুর মো. আব্দুস সালাম বলেন, গতকাল নীরবের সফল অপারেশন হয়েছে। এখন পর্যন্ত সে আইসিইউতে রয়েছে। তবে তার জ্ঞান ফেরেনি। এক লাখ ১৭ হাজার টাকা হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত বিল হয়েছে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। টাকা না দিলে আইসিইউ থেকে নীরবকে বেডে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।  

সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ খাদিজা পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, নীরব খুব মেধাবী ছাত্র। ওর বাবা একজন দরিদ্র মানুষ। চিকিৎসার টাকা যোগান দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। হৃদয়বান ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে মেধাবী নীরব সুস্থ হয়ে বাবা-মার কাছে ফিরে আসতে পারবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।