ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খাগড়াছড়িতে জলাশয়-ছড়া ভরাট করে কফি হাউস-মার্কেট

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৯
খাগড়াছড়িতে জলাশয়-ছড়া ভরাট করে কফি হাউস-মার্কেট ছড়া দখল করে বানানো হচ্ছে ভবন। ছবি: বাংলানিউজ

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলা শহরে চলছে নদী, খাল ও ছড়া দখলের মহোৎসব। এসব জলাশয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে মার্কেট-কফি হাউসসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে বর্ষা মৌসুমে যেমন দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা, তেমনি ভাঙনের কবলে পড়ছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। দখল ঠেকাতে প্রশাসনের কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও।

খাগড়াছড়ি শহরের আশপাশে আগে নদী, খাল ও ছড়ার অস্তিত্ব থাকলেও এখন তা নেই বললেই চলে। প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে দখলবাজরা গিলে খাচ্ছে পুকুর, নদী, খাল ও ছড়া।

প্রভাবশালী চক্র গাইড ওয়াল নির্মাণ করে নদীর গতি পরিবর্তন করছে, বানিয়েছে ভবন।

দখলবাজদের হাত থেকে নদী, খাল, ছড়া উদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টও। কিন্তু খাগড়াছড়িতে তা মানা হচ্ছে না। পার্বত্য এ জেলায় প্রশাসনের নাকের ডগায় ভরাট হচ্ছে পুকুর, নদী, ছড়া ও খাল। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালী মহল নির্মাণ করে চলেছে শপিং মল, বহুতল ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে শহরে। শহরের বসতবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে পানির নিচে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাসিন্দারা।

অভিযোগ রয়েছে, জেলার প্রভাবশালী ঠিকাদার মো. সেলিম খাগড়াছড়ি ছড়ার একাংশ দখল করে তৈরি করেছেন বহুতল সেলিম ট্রেড সেন্টার। এতে ছড়ার পানির স্বাভাবিক গতিপথ বদলে কল্যাণপুর এলাকার দিকে চলে গেছে। স্বাভাবিক গতিপথ বদলে যাওয়ার কারণে অল্প বৃষ্টি হলেই ছড়ার পাশের এলাকায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে।

এই বিষয়ে জানতে মো. সেলিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এদিকে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন পুকুরটি ভরাট করে সেখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে। এ পুকুরের মালিকানা নিয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনস্থ বাজার ফান্ড প্রশাসন এবং জনৈক গোলাপ ফুল চৌধুরীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চলছে। ওই পুকুরসহ বেশ কিছু জমির ওপর উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা রয়েছে। কিন্তু আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে পুকুরটি ভরাট করে সেখানেই পৌরসভা মেয়র রফিকুল আলম বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) অর্থায়নে পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে গোলাপ ফুল চৌধুরীর পরিবার।

শহরের পানবাজার পুকুর ভরাট করে কফি হাউস তৈরি করছে পৌর প্রশাসন। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন ছড়া, জলাশয়, পুকুর ভরাট করে করা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ৩১টি নির্দেশনা দেন। সেখানে ২৫ ও ৩১ নং নির্দেশনায় পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি এ অঞ্চলের বনাঞ্চল, নদী, জলাশয় সংরক্ষণ ও জলাধার রক্ষায় খাল খনন, পুকুর খননের নির্দেশনা দেন।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ বাংলানিউজকে বলেন, চোখের সামনে নদী, ছড়া, পুকুর ভরাট হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনকে। এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কাজ হচ্ছে না।

তার আশা স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত নদী, খাল, ছড়া, পুকুর, জলাশয় রক্ষায় ভূমিকা নেবে। অন্যথায় আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।

এদিকে দখলবাজদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

খাগড়াছড়ি জেলার প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি তালিকা তৈরির কাজ করছি। কারা কারা অবৈধভাবে এসব ভরাট করছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিশ্রুতি নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি নদী, খাল ও ছড়াগুলো দখলমুক্ত হোক।   খাগড়াছড়ি শহরকে বাসযোগ্য রাখতে এর বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৯
এডি/এইচইডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ