ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবৈধ গ্যাস: দিনে বিচ্ছিন্ন, রাতেই ফের সংযোগ 

সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৯
অবৈধ গ্যাস: দিনে বিচ্ছিন্ন, রাতেই ফের সংযোগ  গ্যাসের লাইন। ছবি: বাংলানিউজ

সাভার (ঢাকা): যখন শিল্পাঞ্চল সাভার আশুলিয়ায় গ্যাস সংকটে ভুগছে সাধারণ মানুষসহ শিল্পকারখানা, তখন এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা রাতের আঁধারে অবৈধভাবে দিচ্ছে গ্যাসের সংযোগ। প্রায়ই এসব অবৈধ সংযোগে উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হলেও মিলছে না কোনো ফল। 

দিনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হলেও রাতেই আবার দেওয়া হচ্ছে অবৈধ সংযোগ। অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার দাপট আর কতিপয় বিশেষ কিছু মহলকে ম্যানেজ করে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের এই রমরমা ব্যবসা।

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (তিতাস) সূত্রে জানা গেছে, সাভার ও আশুলিয়ার মোট বৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে ৩৫ হাজার। এসব প্রত্যেকটি সংযোগে একটি করে চুলা থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে এর সংখ্যা অনেক বেশি। যার অধিকাংশই অবৈধ বলে জানান তিতাস কৃর্তপক্ষ।  

গত কয়েকদিনে সাভারের আশুলিয়ার ঘোষবাগ, কাঠগড়া, আনারকলি এলাকার লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত একই সংযোগস্থলে অভিযান পরিচালিত হয়েছে প্রায় ৮ থেকে ১০ বার। তবে বার বার অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হলেও তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন (তিতাস) কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে বিচ্ছিন্ন সংযোগে নতুন করে অবৈধ সংযোগ। আর এভাবেই মূল সংযোগগুলোতে গ্যাস সংকট তৈরি হওয়া ছাড়াও সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

উচ্ছেদ অভিযান হলে প্রকৃতপক্ষে লাভের খাতার অঙ্ক ভারী হয় অসাধু ব্যবসায়ীদেরই। এক একটা আবাসিক সংযোগে পুনঃসংযোগ দিতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করনে সুবিধাভোগী বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে। এছাড়াও মাসে মাসে রাইজার প্রতি এক একটি বাড়ি থেকে আদায় করা হয় ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর এভাবেই কোটিপতি বনে গেছেন গ্যাস খেকো অসাধু ব্যবসায়ীরা।

আর এ অঞ্চল শিল্পাঞ্চল হওয়ার দরুন রাতের আঁধারে সহজেই দিতে পারেন অবৈধ সংযোগ। আর রান্নার জন্য গ্যাসের চাহিদা তুঙ্গে থাকায় বাড়িওয়ালারা ভাড়া বেশি পাওয়ার আশায় যেকোন মূল্যে বৈধ আর অবৈধ যাচাই না করেই অবাধে নিচ্ছেন এই গ্যাস সংযোগ।

আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকার বাড়িওয়ালা অপু আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৫ বার লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। প্রতিবারেই ১০ হাজার করে টাকা দিয়ে নতুন করে সংযোগ নিয়েছি। ভাড়াটিয়ারা সবাই গার্মেন্টসে কাজ করে। তাদের সুবিধার জন্যই গ্যাসের লাইন নিতে হয়। আর গ্যাস লাইন না থাকলে বাড়ি ভাড়াও হয় না এখানে। তাই বৈধ গ্যাস পেলে আমরা উপকৃত হতাম।

আরেক বাড়ির মালিক নার্গিস বেগম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবার সংযোগ নেওয়ার সময় মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। মাসে মাসেও দিতে হয় টাকা। তাই বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে ভাড়াটিয়ার কাছ থেকেই টাকা তুলতে বাধ্য হতে হয়।  

অবৈধ সংযোগ নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈধ না পাইলে কি করুম, চলতে তো অবৈধটাই নিতে হইবো। তবে সরকার যদি আমাদের বাড়ির গ্যাস লাইন বৈধ করে দিতো তাহলে আমাদের এমন দুর্ভোগে পরতে হতো না।  

এ ব্যাপারে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আবু শাহাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই অবৈধ গ্যাস ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার। নিয়মিত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু তারা রাতের আঁধারে আবার সংযোগ দিচ্ছে। ঈদের সময় আমরা অনেক চিন্তায় থাকি। এসময়টি সব পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তাই এসব অবৈধ গ্যাসের লাইনে চাপ বেড়ে যায়। আর অবৈধভাবে নেওয়া গ্যাস সংযোগগুলোর পাইপ অনেক নিম্মমানের হওয়ায় যে কোনো সময় বড় ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে।  

তিনি আরও বলেন, অবৈধ গ্যাস ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। এরই মধ্যে সাভার-আশুলিয়ায় মোট ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, ১৯ জুলাই, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।