ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কুড়িগ্রামে চরম দুর্ভোগে পানিবন্দি সাড়ে ৭ লাখ মানুষ

ফজলে ইলাহী স্বপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
কুড়িগ্রামে চরম দুর্ভোগে পানিবন্দি সাড়ে ৭ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসি এসব মানুষ

কুড়িগ্রাম: ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি ধীরগতিতে কমতে শুরু করলেও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ১০ দিন ধরে পানিবন্দি সাড়ে ৭ লাখের বেশি মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা শহর এখন বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এখানকার প্রশাসনিক ভবনসহ প্রধান সড়কগুলো হাঁটু থেকে বুক পর্যন্ত পনিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকালে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল এলাকায় বাঁধভেঙে পুরো উপজেলা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলা প্রশাসন, থানা, হাসপাতালসহ পুরো এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সব ধরনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

সীমিত আকারে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও অধিকাংশ বন্যার্ত মানুষের ভাগ্যে ত্রাণ জুটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ফলে বানভাসি মানুষ রয়েছেন খাদ্য সংকটে।

বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘরে শুকনো খাবার নেই। নেই রান্নার খড়িও। নলকূপ তলিয়ে থাকায় মিলছে না বিশুদ্ধ খাবার পানি। শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে বিড়ম্বনা। এদের বেশির ভাগ মানুষই বন্যার থৈ থৈ পানির মধ্যে নৌকায় ও ঘরের ভেতর মাচান উঁচু করে অতি কষ্টে দিন-রাতযাপন করছেন। শুকনো খাবারের তীব্র সংকটে পড়েছে পানিতে আটকে থাকা পরিবারগুলো।  

আর যারা ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারাও পড়েছেন নানা দুর্ভোগে। সেই সঙ্গে শত শত মানুষ একসঙ্গে বাঁধ ও পাকা সড়কের দুই ধারে ঝুঁপড়ি ঘর ও পলিথিনের তাঁবু টানিয়ে পরিবার-পরিজন, গবাদিপশু নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ৫৬টি ইউনিয়নের ৫৭৮টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩শ’ পরিবারের সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৯ ঘরবাড়ি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো প্রায় ৫ হাজার মানুষ। বন্যায় ৩২ কিলোমিটার বাঁধ, ৭২ কিলোমিটার কাঁচা ও ১৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ৭৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক এবং ৪টি ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে ১৫ হাজার ১৬০ হেক্টর। জেলার ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩৫ হাজার ৬৪৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৫ মেট্রিক টন জিআর চাল, ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যার্ত সব পরিবারে সহায়তা দেওয়া হবে। কেউ যাতে বাদ না যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
এফইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।