ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সব রেকর্ড ভেঙে গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
সব রেকর্ড ভেঙে গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ

গাইবান্ধা: ত্রিশ বছরের রেকর্ড ভেঙে গাইবান্ধায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। ১৯৮৮ সালের বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এবার বিপদসীমার ১৫০ সেন্টিমিটারে গিয়ে ঠেকেছে। স্মারণকালের ভয়াবহ এ বন্যা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে গাইবান্ধার জনজীবন।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ঘাঘটের পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানান গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান।

সপ্তাহের বেশী সময় ধরে চলামান এ বন্যায় গাইবান্ধা সদরসহ সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, পলাশবাড়ী ও সাদুল্যাপুর উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ।

এর মধ্যে চার লক্ষাধিক বন্যাপীড়িত মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার এবং স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তারা। বাঁধে আশ্রিতরা খাদ্য, পানি এবং পশু খাদ্যের অভাবের কথা জানিয়েছেন।

গ্রামাঞ্চল ছাড়িয়ে এখন জেলা শহরেও প্রতিদিন নতুন নতুন পাড়া মহল্লা প্লাবিত হচ্ছে। জেলা শহরের যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছেন সেখানেও পানি উঠে পড়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

গাইবান্ধা পৌর এলাকায় ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে ৪ হাজার বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে। জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস, স্কুল কলেজ, প্রধান কাঁচাবাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উঠে পড়ায় বন্ধ করতে
হয়েছে বিভিন্ন দোকান পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দিন হাজিরার বিনিময়ে কাজ করা শ্রমিকরা কাজের অভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কে শহরের জেগে থাকা রাস্তাঘাটেও মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। ভেঙে পড়েছে সড়ক ও রেল যোগাযোগ
ব্যবস্থা।

গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম বাংলানিউজকে জানান, লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে গাইবান্ধার ত্রিমোহিনী রেল স্টেশন থেকে বোনারপাড়া জংশন পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে রেল লাইন ডুবে যাওয়ায় বুধবার সকাল ১১টা থেকে ওই রুটে সরাসরি এখন পর্যন্ত সব প্রকার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এখন থেকে ডাউন ট্রেনগুলো গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত এবং আপ ট্রেনগুলো বোনারপাড়া পর্যন্ত চলাচল করছে। তবে আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন বিকল্পভাবে রংপুর-পার্বতীপুর-সান্তাহার হয়ে ঢাকায় চলাচল করছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের কদমের তল থেকে ফকিরপাড়া পর্যন্ত এবং গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-সাঘাটা সড়ক, গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়ক, গাইবান্ধা-বোনারপাড়া সড়ক এখন হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত। ফলে সড়কগুলোতে সব
ধরনের যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে গাইবান্ধা শহরের পিকে বিশ্বাস রোড, সান্তার পট্টি রোড, স্টেশন রোডের কাচারী বাজার
থেকে পুরাতন জেলখানা পর্যন্ত, ভিএইড রোড, ডেভিড কোম্পানিপাড়ার ২টি সড়ক, মুন্সিপাড়া শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়ক, ব্রিজ রোড কালিবাড়িপাড়া সড়ক, কুটিপাড়া সড়ক, পূর্বপাড়া সড়ক, একোয়াস্টেট পাড়া সড়ক, বানিয়ারজান সড়ক, পুলিশ লাইন সংলগ্ন সড়ক হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত।

গাইবান্ধার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক রোকছানা বেগম বাংলানিউজকে জানান, এ পর্যন্ত ১ হাজার মেট্রিক টন চাল, দশ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগ অংশই বিতরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।