ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ওয়াসার ১১টি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি পেয়েছে দুদক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
ওয়াসার ১১টি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি পেয়েছে দুদক

ঢাকা: ওয়াসার ১১টি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২টি সুপারিশও স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান।  

এসময় ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না করে বিভিন্ন অজুহাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়সীমা ও প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়।

এক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং ওয়াসার (পানি সরবরাহ ও পয়:নিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ) ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যুক্ত থাকেন।  

তিনি বলেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি এখনো পানযোগ্য নয়। ওয়াসার ১১টি দুর্নীতি আমরা পেয়েছি। এজন্য ১২টি সুপারিশ করেছি।  

বিভিন্ন প্রকল্পে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে, প্রকল্পের খরচ বেড়ে গেছে উল্লেখ করে ড. মোজাম্মেল বলেন, কালক্ষেপণের কারণে এমন হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদারদের তাদের কাজের চেয়ে বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে। এতে কাজ তুলে নেওয়া যাচ্ছে না। তাই কাজের মান ও পরিসর বিবেচনা করে টাকা ছাড় করলে ভালো ফল পাওয়া যেতো। বলা যায় স্পষ্টতই এখানে ওয়াসার সংশ্লিষ্টতা আছে।

দুদক কমিশনার বলেন, এসব বন্ধে টেকনিক্যাল লোকজনদের নিয়ে সারভেইলেন্স টিম গঠন করা যেতে পারে। প্রাক্কলন পর্যায়ে পেশাদারিত্ব বাড়াতে হবে। ওয়াসার অনেক কাজই অসমাপ্ত। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প ও পদ্মা-যশোদিয়া প্রকল্পেরও অগ্রগতি নেই। মনিটরিং না বাড়ালে এভাবেই পড়ে থাকবে সব।  

তিনি বলেন, প্রকল্পগুলোতে বিদেশি অর্থায়নও থাকে। সরকারি অর্থও থাকে। উভয় স্বার্থ যেন রক্ষা পায়। সরকারের স্বার্থ তথা জনগণের স্বার্থ রক্ষা পাচ্ছে কম। এজন্য নিরীক্ষা জোরদার করতে হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রধান প্রতিবন্ধক। দেশের সব স্তর দুর্নীতি বন্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ওয়াসার বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদনটি আজ আমাদের কাছে দিয়েছে, এটি আমলে নিয়ে তদন্ত করা হবে। এতে যদি মন্ত্রণালয়সহ ওয়াসা ও অন্যান্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কোন ধরনের দুর্নীতি বা গাফলতি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি অঙ্গীকার করে বলছি, দুর্নীতি বন্ধে আমরা কারও কাছে মাথা নত করবো না।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দুর্নীতি বন্ধে করণীয় কী, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছি। সেখানে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালকদের কাজ থেকে প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। সেখানে যাদের অবহেলা চোখে পড়েছে, তাদের পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্প পরিচালকরা কাজে বিলম্ব হওয়ার কিছু যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়েছেন। যেমন- সময় মতো অর্থ ছাড়া না হওয়া ও জমি অধিগ্রহণে নানা অসুবিধা হয়ে থাকে।

ওয়াসার পানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ওয়াসার পানি নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ চলছে। অবশ্যই ওয়াসা নিজে এসবের দায়বদ্ধ। তবে সহযোগিতা করতে হবে সবাইকে।

দুদকের প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের অন্তর্বর্তীকালীন পানি সরবরাহ প্রকল্প, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প, পদ্মা পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প, দাশেরকান্তি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প, ঢাকা মহানগরীর আগারগাঁও এলাকায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওযার্ক উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম আছে। এছাড়া পরামর্শক ও ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে, ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এবং ওয়াসা কর্মচারীদের ওভারটাইম বিল সংক্রান্ত কার্যক্রমে দুর্নীতি ও অনিয়ম পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুর্নীতি প্রতিরোধে ওয়াসাকে দুদক ১২টি সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলো হলো- ঢাকা ওয়াসার চলমান প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ অপচয় রোধে বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থার অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে যৌথ পরিমাণ টিম ও মনিটরিং টিম গঠন করা যেতে পারে। এসব টিম গঠন করা হলে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদাররা প্রকল্প কাজ যথাসময়ে যথাযথভাবে সম্পাদনের বিষয়ে মনোযোগী হবেন এবং এতে সময়, অর্থ অপচয় ও দুর্নীতি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরির সময় কাজের যথার্থতা ও উপযোগিতা আছে কি-না নিশ্চিত হতে হবে। বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যাতে অহেতুক না বাড়ানো হয়, সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা।

দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মনিটরিং বাড়াতে মন্ত্রণালেয়ের শক্তিশালী টিম গঠন করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন, ঠিকাদারের বিল পরিশোধের আগে সুনিশ্চিত হতে হবে শর্তানুযায়ী প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে কি-না। ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মিটার রিডিংয়ের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অবৈধ ওভারটাইম বিল রোধে ঢাকা ওয়াসার কর্মচারীদের জনবল কাঠামো সুনিদিষ্ট করে বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা। ওয়াসার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে গণমাধ্যম, দুদক ও অডিট ডিপার্টমেন্টের নজরদারি বাড়ানো। দুর্নীতি প্রতিরোধে সেবা গ্রহীতাদের নিয়ে ওয়াসার গণশুনানির আয়োজন। ওয়াসার মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নাধীন অবস্থায় বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ টিমের আকস্মিক অভিযান পরিচালনা। এছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বুয়েটসহ অন্যান্য পেশাদার সংস্থাকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯/ আপডেট ১৬৪০ ঘণ্টা
জিসিজি/টিএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।