ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তলদেশ বালুতে ভরে সরতে পারছে না পানি, ভাঙছে তিস্তাতীর

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
তলদেশ বালুতে ভরে সরতে পারছে না পানি, ভাঙছে তিস্তাতীর ‘তলদেশ ভরে যাওয়ায় ভাঙছে তিস্তা’। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: ১০ কেজি ত্রাণের চাল বা ছোট ছোট বাঁধ না দিয়ে, সেই টাকায় তিস্তা নদী খনন করে এবং স্থানীয় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে চিরস্থায়ী বসবাসের নিশ্চয়তা চান তিস্তাপাড়ের মানুষ। 

তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর বন্যা আর ভাঙনের কবলে পড়ে দেশের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। বর্ষা এলে জিও ব্যাগ বা বালুর বস্তা ফেলে সরকারি শত কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে।

মেরামতের নামে অর্থ খরচ করে ছোট ছোট যেসব বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে, তা কয়েক দিনের স্রোতে বিলীন হচ্ছে। আবার কখনো বাঁধের পাশে ভেঙে গিয়ে অকার্যকর হচ্ছে এসব ছোট বাঁধ। কারণ তিস্তা নদীর তলদেশ বালু পড়ে ভরাট হওয়ায় পানিপ্রবাহের রাস্তা না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকালয় ভেঙে সম্প্রসারিত হচ্ছে তিস্তা।  

ভাঙনের কবলে ঘরবাড়ি।  ক্লান্তি যেন শেষ হয় না তিস্তা পাড়ের মানুষের।  ছবি: বাংলানিউজতিস্তার ভাঙনরোধে প্রতিবছর শত কোটি টাকা খরচ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু এতে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না; বরং বেড়েই চলেছে। এছাড়াও বন্যা ও ভাঙনের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার নামে কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেও তিস্তাপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ দূর হচ্ছে না। তাই নদী খনন করে দুই তীরে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ চান তিস্তা পাড়ের মানুষ।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা চন্ডিমারী গ্রামের আব্দুল মজিদ, মহিয়ার রহমান, মোফাজ্জল হোসেন, রাশেদুল ও সোলেমান আলী বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙন শুরু হলে বোমা মেশিনে বালু তুলে প্রতিবছর বাঁধ বা বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের ব্যর্থ চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোমা মেশিনে বালু তোলায় পরক্ষণেই ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ। ১০টি বালুর বস্তা ফেলে ৫০ বস্তার ভাউচার জমা দিয়ে কোটি টাকা লোপাট করছেন তারা। কিন্তু কোনো কাজে আসছে না। সারা বছরের রোজগারে তৈরি করা বাড়ি বন্যা মৌসুমে তিস্তায় বিলিন হয়ে হাজারো পরিবার পথে বসছে। পুরো বছরের আয় এক মুহূর্তে বিলিন হয়ে মিলছে মাত্র ১০ কেজি চালের ত্রাণ। তাই ত্রাণ নয়, তিস্তা খনন করে স্থায়ীভাবে বসবাস করার নিশ্চয়তা চান তারা।

তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি।  পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ যেন শেষ হয় না।  ছবি: বাংলানিউজকুটিরপাড়ের তাহাজুল, আব্দুল আজিজ, মোফাখখারুল ও এন্তাজ আলী বাংলানিউজকে বলেন, তিস্তা নদী জন্মলগ্ন থেকে খনন করা হয়নি। ফলে তলদেশ পলিমাটিতে ও বালুতে ভরাট হয়েছে। পানিপ্রবাহের পথ না থাকায় তিস্তা প্রতিবছর বসতভিটা, ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। প্রতিনিয়ত এ নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। খনন না করে হাজারো বাঁধ দিলেও তিস্তার ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। ভোটের সময় এমপি-মন্ত্রীরা নদী খননের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নেন। মন্ত্রী হয়ে আর এলাকায় আসেন না। তাই তিস্তার স্থায়ী সমাধানে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে না। ফলে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।  

সদর উপজেলার খুয়াগাছের সাইদুল, তমিজ উদ্দিন ও নেপান উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা সরাতে হচ্ছে। একটি গাছ লাগালে ফল খাওয়ার সময় পাই না। নদী খনন করে দুই পাড়ে বাঁধ দিলে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তিস্তাপাড়ে দুর্ভোগের পরিবর্তে কৃষিবিপ্লব ঘটবে। এ জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যস্থা নিতে সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

চেহারায় বিরাজ করছে দুশ্চিন্তার রেখা।  ভাঙতে ভাঙতে আর কতদূর আসবে তিস্তা? ছবি: বাংলানিউজতিস্তার পানিপ্রবাহ টানা ৪দিন বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহের পর সোমবার (১৫ জুলাই) কমে যায়। ফলে তিস্তার পাড়ে দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। গত কয়েক দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি তিস্তায় বিলিন হয়ে গেছে। তিস্তার করালগ্রাসে ভেসে গেছে, কয়েকটি বাঁধ ও রাস্তা-ঘাট। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। মাঠের ফসল নষ্ট হওয়ায় স্বপ্ন ভেঙে গেছে চাষিদের। এভাবে প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের হাজারো পরিবার। কোনো কোনো পরিবার ২০/২৫ বার বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন নদীর ভয়াল থাবা থেকে। এভাবে তিস্তার ভাঙনে নিঃস হচ্ছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।

রোববার (১৪ জুলাই) বন্যা ও ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে তিস্তা পাড়ের মানুষের দাবির মুখে পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ লাঘবে শিগগিরই তিস্তা নদী খনন করে উভয় তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ