মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত সদ্য বিবাহিত বর রাজন শেখের বাড়ির চিত্র বর্তমানে এমন। রাজনের বাবা আলতাফ হোসেন তার ঘরে দফায় দফায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলছেন।
কারও সঙ্গে কোনো কথাই বলতে পারছেন না রাজনের বাবা-মা। বিস্ফোরিত চেয়ে আছে ছোট বোন রূপা খাতুন। একই উঠোনে রাজনের মামার ঘর। দুয়ারে বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন নিহত মামাতো ভাই আলিফের মা আমেনা বেগম।
এমন নিস্তব্ধ শোকাবহ পরিবেশ দেখে চোখের পানি ঠেকাতে পারছেন না দূর-দূরান্ত থেকে আসা শত শত নারী-পুরুষ। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারও কাছেই।
>>আরো পড়ুন: ফুলশয্যা হলো না রাজন-সুমাইয়ার
সরেজিমেনে সিরাজগঞ্জ সদরর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেন বাড়ি গেলে দেখা যায়, বাড়ির চারদিকে বৃষ্টির পানি আর কাদা। আর এই কাদাপানি ডিঙিয়ে শত শত মানুষ ভীড় করছেন সেখানে। শুধু কান্দাপাড়া নয়, আশপাশের গ্রামগুলো থেকেও শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষ আসছেন সমবেদনা জানাতে। শোকাবহ পরিবেশ দেখে অজান্তেই চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে অনেকের।
এ সময় কথা হয়, চুনিয়াহাটি থেকে আসা রাজিয়া খাতুন, কালিয়ার আব্দুল শেখ, মাসুমপুর মহল্লার রাজু, রায়পুরের হাসিনা বেগমের সঙ্গে। তারা বাংলানিউজকে বলেন, নাটক সিনেমা ছাড়া এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি। আল্লাহ এমন শোক যেন আর কাউকে না দেন।
অথচ সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকেই উৎসবে মাতোয়ারা ছিল এই বাড়িটি। অতিথিদের পদচারনায় মুখরিত ছিল বাড়ির আঙিনা। আলতাফ হোসেনের একমাত্র ছেলে রাজনের বিয়ের উৎসবে হাজির হয়েছিলেন পিতৃকুল ও মাতৃকুলের সব আত্মীয়-স্বজন।
আলতাফের প্রতিবেশী জোয়াদ আলী, আছিয়া খাতুন ও আল মাহমুদ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, আলতাফ হোসেন একজন গরুর ব্যবসায়ী। তার ছেলে রাজন টুইষ্টিং মিলের শ্রমিক। বড় মেয়ে স্বর্ণা খাতুনের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে রুপা লেখাপড়া করছে। বাপ-বেটা মিলে সংসারটা ভালোই চালাচ্ছিলেন। সোমবার রাজনের বিয়ে ছিল উল্লাপাড়া উপজেলার এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামের মৃত গফুর শেখের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে। বিয়ের জন্য দুপুরে দুটি মাইক্রোবাসে প্রায় ৩০ জন বরযাত্রী নিয়ে যান তারা। উৎসবমুখর পরিবেশে সেখানে বিয়েও সম্পন্ন হয়। ফেরার পথে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয় বর-কণেবাহী মাইক্রোবাসটি। এতে মারা যান বর-কনে ও তাদের আত্মীয় স্বজন।
এ দুর্ঘটনায় আরও যারা প্রাণ হারান তারা হলেন, রাজনের মামা শামীম হোসেনের একমাত্র ছেলে বায়েজিদ ওরফে আলিফ (৯), রাজনের দূর সম্পর্কের দাদা কাজিপুরা গ্রামের ভাষান শেখ (৫০), তার ফুপুর শশুর সদর উপজেলার রামগাঁতী গ্রামের আব্দুস সামাদ (৪৫), সামাদের ছেলে শফিউল ওরফে শাকিল (১৯), ধর্ম বোনের স্বামী সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার দিয়ার ধানগড়া মহল্লার আলতাফ হোসেনের ছেলে শরিফ হোসেন (৩২), চাচাতো ভগ্নিপতি রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণদিয়ার গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে খোকন (২৪)। এছাড়াও গুরুতর আহত হয়েছেন রাজনের আপন ছোট বোন স্বর্ণা খাতুনের স্বামী সুমন (৩০)। নিহত বাকিরা হলেন, মাইক্রোবাস চালক নুর আলম স্বাধীন (৫৫) ও তার সহকারি আহাদ আলী (৪৫)।
প্রতিবেশীরা বাংলানিউজকে আরও জানান, যারা মারা গেছেন তারা একে অপরের আত্মীয়। তাই সবাই শোকাহত ও হতবিহ্বল। উৎসবমুখর বিয়েবাড়িতে নেমে এসেছে রাজ্যের নীরবতা ও বেদনার নিঃসীম বিমর্ষতা।
>>আরো পড়ুন: উল্লাপাড়ায় রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা, নিহত বেড়ে ১১
>>আরো পড়ুন: ক্রসিংয়ে বিয়ের গাড়িতে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত বেড়ে ১০
>>আরো পড়ুন: উল্লাপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ৯ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এমএমইউ