ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র ঠিকাদারের দখলে!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র ঠিকাদারের দখলে! ঠিকাদারের দখলে থাকা বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র/ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: স্তূপ করে রাখা পাথর। উপর দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া ত্রিপল। পাশেই রাখা মিক্সার মেশিন। বিটুমিনভরা ড্রাম শোভা পাচ্ছে তার পাশে। সময় সময় সেই বিটুমিন জ্বালানো হয়। ঢালা হয় মিক্সার মেশিনে। ভেতরে দেওয়া হয়। মিশ্রণের কাজ শেষে তা সড়ক মেরামতের জন্য নির্দিষ্ট এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় নির্ধারিত যানবাহনে।

এছাড়াও সেখানে রাখা রয়েছে অন্য নির্মাণসামগ্রী। এতে বেশ কয়েকটি স্থান কিছুটা দেবেও গেছে।

সেখানে আটকে আছে পানি। আর মিক্সার মেশিনের ধোঁয়ায় ধোঁয়াচ্ছন্ন পুরো এলাকা। দৃশ্যটা বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের। প্রভাবশালী একজন ঠিকাদার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রটি দখলে নিয়ে সড়ক মেরামতের কাজ করছেন। আর ভবনটি ব্যবহার করছেন ঠিকাদারের নির্ধারিত শ্রমিকরা।
 
অথচ আশ্রয়কেন্দ্রের মাত্র দুই কিলোমিটার আগে যমুনা নদী ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্র বেদখল হওয়ার কারণে সেখানে বন্যাদুর্গতরা আশ্রয় নিতে পারছেন না। ফলে বাঁধসহ নানা স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন বানভাসিরা। যমুনার সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে বন্যার্তদের। কিন্তু তাদের দুঃখের সীমা লাঘবে নির্মাণ করা আশ্রয়কেন্দ্র এখনও ঠিকাদার দখলে। যা অনেকটা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
 
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বড়বিলা গ্রাম ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে সরকারিভাবে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনসহ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দুর্গত গৃহহারা মানুষজন, তাদের সহায় সম্পদ ও প্রাণিসম্পদ নিয়ে এখানে আশ্রয় নিতে পারেন সেই লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রটি। কিন্তু ঠিকাদারের দখলে থাকায় সেখানে কোনো বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিতে পারেননি।
 
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে যমুনা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনাবেষ্টিত ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া রাধানগর চরের ৮৮টির মতো পরিবারের বসতবাড়ি গত কয়েকদিন যমুনা গিলে ফেলেছে। গৃহহারা এসব বানভাসিরা সহড়াবাড়ি বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ এসব বানভাসিদের আশ্রয় মেলেনি সেই বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঠিকাদার সিহাব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখানকার ঠিকাদার না। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার একজন ঠিকাদারের কাজ দেখভাল করি মাত্র।
 
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রটি ব্যবহারের জন্য কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে দু’একদিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে গেলে আশ্রয়কেন্দ্রটি ছেড়ে দেওয়া হবে। তখন এখানে বানভাসিরা আশ্রয় নিতে পারবেন।
 
ধুনট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) জিনাত রেহানা বাংলানিউজকে বলেন, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র বন্যার্তদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। এটি কেউ ব্যবহার করে থাকলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি বানভাসিদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হবে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এমবিএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।