ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দিনাজপুর শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল, শহরে ঢুকছে পানি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
দিনাজপুর শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল, শহরে ঢুকছে পানি

দিনাজপুর: পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় আবারও ফাটল ধরেছে দিনাজপুর শহর রক্ষা বাঁধে। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যার ‘উৎপাদনকারী’ দিনাজপুর শহরের মাহুতপাড়া তুতবাগানের সামনে থেকে এবারও ফাটল দেখা দিয়েছে। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় দিনাজপুর শহর ডুবে যায় ওই স্থানে বাঁধ ভাঙার কারণে। এবারও একই স্থানে মাটির বাঁধে দেখা দিয়েছে ফাটল। বাঁধের নিচের দিয়ে ফুটো হয়ে চুয়ে চুয়ে পানি ঢুকছে শহরে।

তবে জেলার নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করায় দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান।
 
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট দিবাগত রাতে হঠাৎ বন্যার কবলে পড়ে উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুর।

দিনাজপুর শহরের মাহুতপাড়া তুতবাগানের সামনে শহররক্ষা বাঁধের নিচে দিয়ে যাওয়া ছোট ড্রেন থেকে ঢুকতে থাকে পুনর্ভবা নদীর পানি। পরে ৩৫ ফিট বাঁধ ধসে যায়। পুনর্ভবা নদীর পানি ঢুকে পড়ে দিনাজপুর শহরে। আকস্মিক বন্যার কারণে সেসময় প্রাণ হারান ২৯ জন। দিনাজপুর শহরের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা পানির নিচে চলে যায়। জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীকে তলব করেন জেলা প্রশাসক। বন্যাকবলিত এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে আটকে পড়াদের উদ্ধার এবং শহর রক্ষা বাঁধের ধসের স্থানে বালি ও মাটি দিয়ে ভরাট করে শহরকে রক্ষা করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনাজপুরে এসে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও ওই স্থান যাতে আবারও ধস না নামে সেজন্য ঠিকমতো মেরামত করার নির্দেশ দেন।
 
ভয়াবহ বন্যার প্রায় ২ বছরের কাছাকাছি সময়ে আবারও দিনাজপুর বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে বাঁধের সেই স্থানে আবারও ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বাঁধের ফাটলের নিচের স্থান দিয়ে ছোট ফুটো হয়ে চুয়ে চুয়ে পানি প্রবেশ করছে দিনাজপুর শহরে।
 
সরেজমিনে মাহুতপাড়া তুতবাগানের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বাঁধের ফাটলের স্থানের উপর দিয়ে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ঘিরে ফেলা হয়েছে ওই স্থানটি। পলিব্যাগ ও অন্যান্য মাধ্যমে এনে রাখা হয়েছে মাটি ও বালু। তবে ফাটল ধরা স্থান মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কমর্কর্তাকে কাজ করতে দেখা যায়নি।  যে কোনো সময় ঘটতে পারে আবারও বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার মাহমুদুল আলম বাংলানিউজকে জানান, জেলার ৩টি প্রধান নদীতে সোমবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৩ দশমিক ৫০০ মিটারের স্থলে ৩২ দশমিক ৪২০ মিটার, আত্রাই নদে পানি বিপদসীমার ৩৯ দশমিক ৬৫০ মিটারের স্থলে ৩৯ দশমিক ১০০ এবং ছোট যমুনার নদীর পানি বিপদসীমার ২৯ দশমিক ৫০০ মিটারের স্থলে ২৮ দশমিক ৬৮০ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। সার্ভেয়ার জানান, বৃষ্টি এবং অন্যান্য নদীর পানি পুনর্ভবাসহ ৩টি নদীতে প্রবাহিত না হলে পানি আরও কমে যাবে।
 
দিনাজপুর পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল আলম রমজান বাংলানিউজকে জানান, তিনি সকাল থেকে বাঁধের পাশে অবস্থান করছেন। বন্যা শেষ হলেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে।
 
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, জেলার নদীগুলোর পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তাই বাঁধ ফাটলের ফলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পানি কমে গেলেই বাঁধের নিচ দিয়ে পানি চুয়ে চুয়ে শহরে প্রবেশ করা বন্ধ হবে। বন্যার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ