ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

যমুনায় রেকর্ড পানি বৃদ্ধি, বিপদসীমার ১৩৭ সে.মি. ‍ওপর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
যমুনায় রেকর্ড পানি বৃদ্ধি, বিপদসীমার ১৩৭ সে.মি. ‍ওপর বন্যায় প্লাবিত স্কুল প্রাঙ্গণ। ছবি: বাংলানিউজ

জামালপুর: সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে যমুনার পানির স্তর। ২০১৭ সালে ১৩৪ সেন্টিমিটার পানির রেকর্ড ভেঙে বর্তমানে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট এলাকার পানি বিপদসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটারে ওপরে অবস্থান করছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আব্দুল মান্নার এ তথ্য দিয়ে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ২০১৭ সালে এ পয়েন্টে সর্বোচ্চ পানি বিপদসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

১৯৮৮ সালে ছিল ১২১ সেন্টিমিটার ওপর।

এদিকে বন্যায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে জামালপুরের ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কার্যত পানির নিচে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, বাসভবন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়সহ সব দাফতরিক কার্যালয় এখন পানির নিচে। এরইমধ্যে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রেল লাইনে পানি উঠায় ঝুঁকি নিয়ে রেল চলছে। যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে রেল যোগাযোগও।

উপজেলা ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে বলে ইউপি’র চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন। উপজেলা সদর থেকে গুঠাইল বাজার, উলিয়া বাজার, শিংভাঙ্গা, কুলকান্দি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বন্যায় ইসলামপুর-উলিয়া এবং ইসলামপুর-গুঠাইল ও ইসলামপুর-কুলকান্দি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইসলামপুরের ৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে রয়েছে।

উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের দক্ষিণ চিনাডুলি, দেওয়ানপাড়া, ডেবরাইপেচ, বলিয়াদহ, সিংভাঙ্গা, পশ্চিম বামনা, পূর্ববামনা, গিলাবাড়ী, সাপধরী ইউনিয়নের আকন্দ পাড়া, পশ্চিম চেঙ্গানিয়া, পূর্ব চেঙ্গানিয়া, ওকাশাড়ীডোবার, কুলকান্দি ইউনিয়নের বেরকুসা, টিনেরচর, সেন্দুরতলী, মিয়াপাড়া, বেলাগাছা ইউনিয়নের কাছিমারচর, দেলীপাড়, গুঠাইল, পাথর্শী ইউনিয়নের শশারিয়াবাড়ী, মোরাদাবাদ, মুকশিমলা, হাড়িয়াবাড়ী পশ্চিম মুজাআটা, নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের ওলিয়া, রামভদ্রা, কাজলার অঞ্চলগুলোর বিস্তীর্ণ জনপদের বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
বসতবাড়িতে পানি উঠায় রাস্তায় গবাদি পশু।  ছবি: বাংলানিউজ
গত তিনদিনে বন্যার পানির তীব্র স্রোতে বেলগাছা ইউনিয়নের মন্নিয়ার চর, বরুল, চিনাডুলী ইউনিয়নের দেওয়ান পাড়া নোয়ার পাড়ার বৌশেরগড়সহ প্রায় শতাধিক বসতভিটা ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা আশপাশের উঁচুজায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

পশ্চিমাঞ্চলে ৮২টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠায় সেগুলো বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও পৌর শহরের নতুন নতুন এলাকা চাড়িয়া, মোজাজাল্লা, বেপারীপাড়া প্লাবিত হয়েছে বলে কাউন্সিলর অংকন কর্মকার ও মহন মিয়া জানিয়েছেন।

এখন পর্যন্ত ৯০ মেট্রিক টন চাল ও ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ হয়েছে বলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী যমুনা থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে ইসলামপুরের সাপধরী, চিনাডুলি, বেলগাছা, কুলকান্দি, নোয়ারপাড়া, পাথর্শী ও ইসলামপুর সদর ইউনিয়নগুলোর লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা, পিংনা, আওনা, ভাটারা ও কামরাবাদ ইউনিয়নে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও জনবসতি এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় বকশীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বন্যার কারণে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ইসলামপুর উপজেলায় ৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর-উলিয়া রাস্তার খরকা এলাকায় কাঠের পুরনো সেতুটি বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে যাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চত্বরও আশপাশের বাসাবাড়িতে একবুক পানি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।