ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কখন আসবে খাবারের ট্রলার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
কখন আসবে খাবারের ট্রলার!

বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা (নেত্রকোণা) ঘুরে: সামাজিক অবস্থান নিয়ে আর কোনো হিসাব হচ্ছে না। বন্যাদুর্গত এলাকায় এখন সবার পরিচয় একটাই, ‘বানভাসি’। এই ‘বানভাসি’দের ছোট-বড় সবাই অসহায় দূরদৃষ্টি নিয়ে সাহায্যের ট্রলারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকছে। ট্রলার দেখা বা শব্দ শোনা মাত্রই শুকনো খাবার নিতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তারা। কারণ, যে আগে পৌঁছাবে সেই খাবার আগে হাতে পাবে। এমন চিন্তায় বয়স বা শক্তি সামর্থ্য ভুলে ঝুঁকি নিয়ে বন্যার অথৈ পানিতে শিশু থেকে বৃদ্ধা সাঁতরে চলে যাচ্ছে ট্রলারের কাছে!

রান্নার চুলা থেকে শুরু করে বিছানা-আসবাবপত্র, বন্যার পানিতে দুর্গতদের তলিয়ে গেছে সবকিছুই! মানবেতর জীবনযাপনে সরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্য-সহযোগিতাই এখন তাদের টিকে থাকার শেষ ভরসা। টিকে থাকার এই সংগ্রাম এখন নেত্রকোণার বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে।

সময় যত গড়াচ্ছে জেলায় বাড়ছে প্লাবিত উপজেলা ও গ্রামের সংখ্যা। শুরুর দিকে জেলার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা উপজেলা বন্যার কবলে পড়লেও পর্যায়ক্রমে বারহাট্টা, পূর্বধলা, আটপাড়া ও সদরের কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সেসব এলাকার লাখো মানুষ।  

নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সোমশ্বরী ও ধনু নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার কিছুটা নিচে থাকলেও কংস ও উব্দাখালি নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে।

জেলা সদরের কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের হাতকুন্ডলি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম ও তার স্ত্রী মনোয়ারা, সামছু মিয়া ও তার স্ত্রী মোসাম্মৎ সাহেরা, শফিকুল ও তার স্ত্রী হাওয়া, সকুমার শিল ও তার স্ত্রী ইতি শিলের সঙ্গে কথা হচ্ছিল বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে।

বাংলানিউজকে তারা জানান, তিন দিন ধরে তারাসহ গ্রামের কয়েক শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা আসেনি। পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করে কোনোরকম পানিতে টিকে থাকা হচ্ছে তাদের।

খাবার নিয়ে আসা ট্রলারের দিকে ছুটছে বন্যাদুর্গত পরিবারের শিশুরা।  ছবি: বাংলানিউজএদিকে ক্রমেই পানি বেড়ে যাওয়ার তথ্য দিয়ে নেত্রকোণা সড়ক ও জনপথের (সওজ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাকিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোণা ২১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৪ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে পানি গড়াচ্ছে। এতে করে সড়কটি আরও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও দুর্গাপুরের বিজয়পুর সড়কের বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্প এলাকায় ১৫ মিটার নতুন সড়ক, শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কের ২০ মিটারের মতো অ্যাপ্রোচসহ ওই সড়কের ইন্দ্রপুর এলাকায় একটি বক্স কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, জেলার চার উপজেলার (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা-বারহাট্টা ও পূর্বধলা) ২১৭টি গ্রামের ১৭ হাজার ৬০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ৮৮ হাজারের মতো মানুষ। তবে স্থানীয়দের দাবি দুর্ভোগে পড়া মানুষের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বাংলানিউজকে জানান, বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯৬৩টি পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ১ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় ১২ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে তাদের সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

নেত্রকোণার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, বন্যাকবলিত ২০০ পরিবার ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য বিভিন্ন স্থানে ৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অসহায় মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ১১০ মেট্রিক টন চাল ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সহযোগিতা মজুদ রয়েছে জেলা প্রশাসনে। প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সব বিতরণ করা হবে।

এছাড়া বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বা সংগঠন এবং জনপ্রতিনিধিরা বন্যার্তদের সহযোগিতায় মাঠে কাজ করছেন। প্রত্যেকে নিজের সাধ্যমতো দুর্গতদের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।