গত বছর চামেলীর করুণ পরিস্থিতির বিষয়টি গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করেন। ওই সময় আরও অনেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন।
এদিকে চামেলীর শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হয়েছে জানিয়ে আর্থিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে চামেলী লিখেছেন, ‘আমি চামেলী খাতুন। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক একজন খেলোয়াড়। আমি ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছি। খেলাকালীন আমি ইনজুরিতে আক্রান্ত হই। তাই ক্রিকেট ক্যারিয়ার দীর্ঘ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
খেলাকালীনই আমি আনসার-ভিডিপিতে চাকরিতে যোগদান করি। এখনো সেখানে আমি চাকরিরত আছি। ২০১১ সালের পর আমি খেলা ছেড়ে চাকরিতে মনোনিবেশ করি। গত বছরের মাঝামাঝিতে আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আমার দুই পা প্যারালাইজড হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তখন আমার ফেসবুক পোস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ক্রিকেটবোর্ডের নজরে আসলে তারা আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আমি বেঙ্গালুরুতে পায়ের লিগামেন্ট সার্জারি করে আসি। তখন মোটামুটি সুস্থ হয়েছিলাম।
ওখানকার চিকিৎসক আমাকে এ বছরের মার্চে ফলোআপ করার জন্য ডেকেছিলেন। আমার অল্প টাকার চাকরি। আর পরিবারের বৃদ্ধ মা-বাবা আর স্বামী হারা বোনকে নিয়ে থাকি। চাকরির টাকায় সংসারই চলে না ভিনদেশে চিকিৎসা করা তো বহুদূরের কথা। ফলোআপে না যাওয়ার কারণে হোক বা সেখানে চিকিৎসার ঘাটতির কারণেই হোক আমার অবস্থা ইদানীং আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমার দু’পা ফুলে গেছে। আমার মেরুদণ্ডের হাড় ৪ ডিগ্রি বাঁকা। আমি ঠিকমতো নড়াচড়াও করতে পারি না। এজন্য আমি ঠিকমতো অফিসও যেতে পারছি না।
আমার ডিপার্টমেন্ট আমাকে যথেষ্ট সুযোগ দিচ্ছে। আমি ঠিকমতো যেতে পারি না এবং অসুস্থ হলে তারা আমাকে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু এভাবে আর কত! কাউকে বসিয়ে তো বেতন দেওয়া যায় না। এই চাকরি চলে গেলে আমার পরিবার না খেয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হবে। এমতাবস্থায় আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।
ক্রিকেট অনুরাগী, ক্রিকেটবোর্ড, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আর্জি আমাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ হওয়ার জন্য একটু সহযোগিতা করুন। আমি ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। বেশিক্ষণ বসে থাকলে কোমড় পা ব্যথা করে এবং পায়ে পানি আসে। দিন দিন অবস্থা আরও অবনতি হচ্ছে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করালে হয়তো পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারি। এখনই শারীরিক কষ্টে আমি ঠিকমতো ডিউটি করতে পারি না। আমি এখন আমার ও আমার পরিবার নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত। আমরা একরুমে চারজন থাকি। তার অবস্থা কি তা ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন।
আমি খুব বেশি অসহায় হয়েই মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়েছি। আপনারা যদি এগিয়ে না আসেন একটা পরিবার ধ্বংসের মুখে পড়বে। দয়া করে, আমার চিকিৎসার জন্য আপনারা কিছু করুন। খুব বেশি কষ্ট, অসহায় অবস্থা নিয়ে আমি এই আর্জি করছি’।
এদিকে তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চামেলীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার বড় বোন চম্পা খাতুন ফোন রিসিভ করেন। চামেলী অসুস্থার কারণে কথা বলতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
চম্পা খাতুন বলেন, ভারতে অপারেশনের পর চামেলী মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেছিল। হাঁটাচলা করতে পারছিল তখন। মার্চে ফলোআপের জন্য আবারও ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থাভাবে যেতে পারেনি। এখন শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হয়েছে। তার দু’পা ফুলে গেছে। বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে সে।
আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, তাকে (চামেলী) আর্থিক সাহায্যের জন্য এর আগে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সবাই সহায়তা করেননি। চিকিৎসার জন্য মোট ৬ লাখ টাকা পেয়েছিলাম তখন। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে দিন দিন। দ্রুত তার চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৯
এসএস/এএটি