আবহাওয়া অধিদফতর এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র শুক্রবার (১২ জুলাই) জানিয়েছে, ভারী বর্ষণ হতে পারে আরও দু’দিন। এতে আগামী তিনদিন নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যার অবনতি হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, সোমেশ্বরী, কংস, তিস্তা সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুরমা নদী কানাইঘাট, সিলেট, সুনামগঞ্জে; কুশিয়ারা নদী সিলেটের আমলশীদ, শেওলা ও শেরপুরে; খোয়াই নদী হবিগঞ্জের বাল্লায়; সোমেশ্বরী নদী কলমাকান্দায় তিস্তা নদী নীলফামারীর ডালিয়ায় এবং সাঙ্গুনদী বান্দরবন ও চট্টগ্রামের দোহাজারীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের সব প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বাড়ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারত আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশগুলোর বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি হতে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ৭২ ঘণ্টায় সব প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বাড়তে পারে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টায় যমুনা নদীর জামালপুর জেলায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্ট বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
আর আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী ও সাঙ্গুসহ প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল দ্রুত বাড়তে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় নিম্নাঞ্চল
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
ভারী বর্ষণের সতর্কতায় বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল ১০টা পর্যন্ত রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। অতিভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি অথবা ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
সন্ধ্যা ৬টা হতে ৪৮ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সমেয়র শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। তবে ৫ দিনের পূর্বাভাসে উল্লোখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে জানানো হয়েছে।
সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ১৯৭ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকা ৯৪, ময়মনসিংহে ৫৪, সিলেটে ৩২, রাজশাহীতে ২৫, রংপুরে ৯, খুলনায় ৫৯ এবং বরিশালে ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি
অতিবৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা, লালমনিরহাট, নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
জরুরি যোগাযোগ
দুর্যোগ সম্পর্কিত তথ্য সেবার জন্য ১০৯০-তে ফোন করে সমুদ্রগামী জেলে, নদী বন্দরগুলোর সতর্ক বার্তা, দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার বিশেষ সতর্ক বার্তা পাওয়া যাবে। নম্বরটি টোল-ফ্রি। এ নম্বরে ফোন করে সেবা নেওয়ার জন্য কোনো টাকা কর্তন করা হয় না।
বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর-৯৫৭০০২৮।
সার্বক্ষণিক মিডিয়া সেল স্থাপন
বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে গণমাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে সংবাদ সরবরাহের সুবিধার্থে বাংলাদেশ সরকারি সংবাদ মাধ্যমগুলোতে সার্বক্ষণিক মিডিয়া সেল খোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন: টেলিফোন নম্বর- ৪৮৩১২৬৮৫, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা: টেলিফোন নম্বর-৯৫৫৫০৩৬, ০১৭১৩৩৮৯৮৭৩, বাংলাদেশ বেতার: টেলিফোন নম্বর-৮১৮১৮৯৭, ৮১৮১৮৯৬, তথ্য অধিদফতর: টেলিফোন নম্বর- ৯৫১২২৪৬, ৯৫১৪৯৮৮, ৯৫৪০০১৯; ফ্যাক্স নম্বর-৯৫৪০৯৪২, ৯৫৪০০২৬, ৯৫৪০৫৫৩।
ত্রাণ সামগ্রী
অতিবৃষ্টির কারণে দেশের ৬৪টি জেলায় বন্যা মোকাবিলায় ১৭ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও দুই কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
** বন্যা পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম, ১০৯০-তে পূর্বাভাস
বাংলাদেশ সময়: ০১০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৯
এমআইএইচ/ওএইচ/