শুক্রবার (১২ জুলাই) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের ঊদ্ধর্তন এক কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার, রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।
আটক পণ্যের বিপরীতে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ডিং কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, উপ-কমিশনার মেহেবুব হকের নেতৃত্বে একটি দল সন্ধ্যায় চকবাজারের মোর্শেদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়। এসময় কারখানার ভেতরে গোপনে বন্ডেড সুবিধায় আমদানি করা ও অবৈধভাবে বিক্রির জন্য মজুদ করা বিপুল পরিমাণ বিওপিপি ফিল্ম ও সিপিপি ফিল্ম পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ এসব পণ্য আমদানি বা মজুদের পক্ষে বৈধ কোনো দলিল বা কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। একারণে গুদামটি সিলগালা করা হয়।
‘এছাড়া, উপ-কমিশনার ফখরুল আমিন চৌধুরি নেতৃত্বে আরেকটি দল হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় বন্ডেড চোরাই পণ্য পরিবহন ও খালাসকালে পিপি-দানা বোঝাই পাঁচটি কাভার্ড ভ্যান আটক করা হয়। এসব পণ্য বিভিন্ন বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউস থেকে অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ’
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এনডিসির নির্দেশনা ও কমিশনার এস এম হুমায়ূন কবীরের নেতৃত্বে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কাস্টমস কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে ২১টি ফেব্রিক্স প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার ধরা পড়েছে। এতে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকার মালামাল জব্দ হয়েছে, যা থেকে সরকার রাজস্ব পেত ১২৬ কোটি টাকা। তাদের বিরুদ্ধেও শুল্ক আইনে মামলা করা হয়েছে।
দেশি শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের কাগজ এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, মানও ভালো। পাশাপাশি, চাহিদার চেয়েও বেশি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে দেশি কাগজকলগুলোর। তারপরও বন্ড সুবিধার আওতায় বিপুল পরিমাণ কাগজ আসছে বিদেশ থেকে। তাদের অভিযোগ, দেশে উৎপাদিত কাগজের মান-পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলেও আমদানি করা কাগজের মান যাচাই করা হচ্ছে না। ফলে, মিথ্যা ঘোষণা আর শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা নিম্নমানের বিদেশি কাগজ কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো পুনঃরপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। এসব কাঁচামাল বা পণ্য সরকার-নির্ধারিত গুদামে (বন্ডেড ওয়্যারহাউস) রক্ষিত থাকে। কিন্তু, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য এনে অবৈধভাবে অপসারণের মাধ্যমে তা খোলাবাজারে বিক্রি করছেন। বন্ড সুবিধায় আনা কাপড়, প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজপণ্য, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, কার্ড বোর্ড, বৈদ্যুতিক পাখা, অ্যাসিটিক অ্যাসিড, পেডিং (ব্লেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল) ইত্যাদি দ্রব্য ও পণ্য ওয়্যারহাউজে যাওয়ার আগেই খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বন্ড সুবিধার পণ্য কালোবাজারে বিক্রি ও চোরাকারবারি ঠেকাতে সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ঝটিকা অভিযান শুরু করেছে। তবু, ঠেকানো যাচ্ছে না অসাধু চক্রকে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্যে তারা সয়লাব করছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজার। পুরান ঢাকার ইসলামপুর, নয়াবাজার, চকবাজার মোড়েও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা এসব পণ্য। আর বন্ডেড পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে, প্রত্যাশিত রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা।
দেশে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স থাকলেও, অনিয়মের কারণে ১ হাজার ৭৫৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কাস্টমস। আবার, কারখানা বন্ধ থাকার পরও বন্ড লাইসেন্স আছে ২ হাজার ৪৩৮টি পোশাক ও প্যাকেজিং কারখানার।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৯
জিসিজি/একে