ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জোয়ারে ডুবে যায় কমলনগর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৯
জোয়ারে ডুবে যায় কমলনগর বৃষ্টিতে মেঘনায় পানি বাড়ছে। ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে মাইলের পর মাইল বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় মেঘনা উপকূল অরক্ষিত। জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় বিস্তীর্ণ এ জনপদ। বর্ষা এলেই উপজেলাটিতে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রূপ নেয়। তলিয়ে যায় ফসলের মাঠ। বাড়ির উঠান মাড়িয়ে ঘরে উঠে জোয়ারের পানি। বর্ষা এলেই এখানকার মানুষের মনে বেড়ে যায় দুশ্চিন্তা। এ যেনো প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা। 

তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে কমলনগরে মেঘনার ভাঙনে হারিয়ে গেছে, রাস্তাঘাট, হাট বাজার, ফসলি জমি, আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মসজিদসহ বহু সরকারি বেসরকারি স্থাপনা। বিলীন হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ।

বেড়িবাঁধ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে কমলনগরের মানুষের দুঃখের আর অন্ত থাকে না।

আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট পানি বেড়ে যায়। এ সময় জোয়ারের পানিতে ভাসতে থাকে কমলনগরের উপকূলীয় এলাকা।

বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে উপজেলার চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, চর জগবন্ধ, ফলকন, পাটারিরহাট এলাকার হাজার হাজার পরিবারকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বাড়ি-ঘরে পানি উঠে বন্দি হয়ে পড়ে তারা। ক্ষতি হয় সড়ক ও কাঁচা ঘরবাড়িসহ হাজার হাজার একর জমির ফসল। এছাড়াও হুমকিতে পড়ে গবাদি পশু।  

জোয়ারের সময় উপজেলাটির সাহেবেরহাট, কালকিনি ও চর ফলকন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি দ্রুত ঢুকে পড়ে আশপাশের এলাকায়। চলাচলের রাস্তা পেরিয়ে পানিতে ডুবে যায় বসত ঘর।  

উপজেলার মাতাব্বরহাট বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, জোয়ারের সময় মাঠঘাট পেরিয়ে বাজারেও পানি উঠে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিপাকে পড়তে হয়।  

সাহেবের হাট এলাকার বাসিন্দা রইজল মিয়া বলেন, বর্ষা এলেই আতঙ্ক বাড়ে। জোয়ারের পানি ঘরে ঢুকে ঘরের মালামাল নষ্ট হয়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে থাকতে হয়। প্রতিবছর বাড়ি ঘর মেরামত করতে হয়।

চর কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ, চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাজি হারুনুর রশিদ বলেন, জেয়ার এলেই অরক্ষিত হয়ে পড়ে তাদের ইউনিয়ন। পানিবন্দি হয়ে পড়েন হাজার হাজার পরিবার। এসময় দুর্ভোগের শেষ থাকে না। শিশু ও বৃদ্ধরা থাকেন চরম ঝুঁকিতে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তাঘাট। এমন পরিস্থিতিতে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ জরুরি। এতে নদী ভাঙন প্রতিরোধ হবে। নিরপাদে থাকবে এ জনপদের মানুষ।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় ৩৫ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে গত বছর কমলনগরে এক কিলোমিটার ও রামগতিতে সাড়ে চার কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে কমলনগররে আট কিলোমিটার ও রামগতিতে সাড়ে সাত কিলোমিটার এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১৪ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুমোদন না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ থেমে আছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা বাংলানিউজকে বলেন,  মেঘনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে দ্বিতীয় পর্যায়ের তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৯
এসআর/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।