টানা তিনদিন বন্যার পানিতে ডুবে থাকা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী মহিষখোচা ইউনিয়নের পাসাইটারী ঈদগাহ মাঠ এলাকার ইচার আলীর স্ত্রী মর্জিনা বেগম এভাবে শুকনো খাবারের জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন।
মর্জিনা বেগম বাংলানিউজকে জানান, টানা পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় ঘরের শুকনো খাবার শেষ হয়ে গেছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এরআগে, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাত ৯টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার। যা ছিল বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপরে। তবে শুক্রবার সকাল থেকে পানি কিছুটা কমেছে বলে দাবি করে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা জানায়, উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত পাঁচ দিনের ভারী বৃষ্টি। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। এর সঙ্গে বুধবার (১০ জুলাই) রাত থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে বড় সমস্যায় পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়ের প্রায় ১০/১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী এলাকার ব্রিজ কালভার্ট ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। ভেসে যাচ্ছে শতশত পুকুরের মাছ। নষ্ট হয়েছে চাষিদের বাদাম, ভুট্টা ও সবজিসহ নানা ফসল।
গোবর্দ্ধন বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্প্যার বাঁধ-২ এলাকার আলম বাদশা, মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আগে বন্যা হলে এক দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে যেত। এবার টানা ৪/৫ দিন হয়ে গেলো পানি কমছে না। আগে বন্যা শুরুতে সরকারিভাবে শুকনো খাবার দেওয়া হতো, এ বছর সেটাও নেই।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের আলতাব উদ্দিন ও আবু তালেব বাংলানিউজকে বলেন, এমন বন্যা তো দেখিনি। পানি শুধু বেড়েই চলেছে। ঘর বাড়ি রাস্তা-ঘাট সর্বত্রই পানি আর পানি। দীর্ঘ সময় পানিতে থাকায় বাড়ির অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
আদিতমারী উপজেলার ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিসার মফিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার্তদের জন্য ১২ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শুক্রবার বিকেলে বিতরণ করা হবে। তবে শুকনো খাবারের প্রয়োজন থাকলে বরাদ্দ না থাকায় দেওয়া হচ্ছে না।
হাতীবান্ধা উপজেলার ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম বাংলানিউজকে জানান, তার উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তা নদীর অববাহিকায়। তিস্তায় সামান্য পানি বাড়লেই কিছু পরিবার পানিবন্দি হন। কিছু এলাকায় ত্রাণের চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে সব ইউনিয়নে বিতরণ হবে ত্রাণের চাল।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে পানি প্রবাহ কিছুটা কমতে শুরু করায় শনিবার (১৩ জুলাই) বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৯
এনটি